বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান -মহিউদ্দিন মহারাজ এমপি কাউখালীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন কাউখালীতে মৎস্য সুফলভোগী জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরন ভান্ডারিয়ায় বিহারী লালমিত্র পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কাউটদের দীক্ষা অনুষ্ঠান ভান্ডারিয়ায় পিকআপে করে গরু চুরির সময় ৩ চোর আটক কাউখালী উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ে জনবল সংকট থাকার কারণে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত স্বামী ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আবারো ৩ জন নিহত পিরোজপুরের এক জেলের জালে ধরা পড়ল ২০ লাখ টাকার লাক্ষা মাছ কাউখালীতে বঙ্গবন্ধুর ১০৪ তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত ভান্ডারিয়ায় জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত পিরোজপুরে বাস অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৭ জন নিহত কাউখালীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ উদযাপিত কাউখালীতে মৎস্য কার্ডধারী জেলেদের ছাগল বিতরণ ভান্ডারিয়ায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত ভান্ডারিয়ায় জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে কাউখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের শেষ বিদায় কাউখালীতে ব্রীজ নির্মান কাজ ৫ বছরে শেষ না হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি চরমে কাউখালীতে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি অংশ–মহিউদ্দিন মহারাজ (এমপি)
কলাপাড়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরগাছ ও প্রিয় খেজুররস ॥

কলাপাড়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরগাছ ও প্রিয় খেজুররস ॥

কলাপাড়াসহ দখিনের জনপদের সাধারন মানুষের সবচাইতে প্রিয় খেজুরের রস গ্রাম-বাংলার একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য উপাদানের নাম। বাঙালির প্রাণের অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা খেজুর রস সংগ্রহ এবং এর ব্যবহার চোখে পড়ে শীত মৌসুমে। এ সময় আমন ধানের আগমন ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত গ্রামের মানুষগুলোকে। কিন্তু এখন কৃষকদের ধান কাটতে দেখা গেলেও খেজুররস সংগ্রহে দেখা মিলছে খুব কম সংখ্যক গাছীকে। কলাপাড়ার দুটি পৌরসভাসহ ১২ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার গাছিরা ইতোমধ্যে খেজুর গাছের মালিকদের সঙ্গে চুক্তিতে গাছ নিয়েছে। তারা এসব গাছ কেটে এখন রস সংগ্রহ করছেন পুরোদমে। যদিও আগের মতো শত শত খেজুর গাছের সারি আর দেখা যায় না। এরপরও যে গাছগুলো আছে শীত মৌসুমে সেই গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।

গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চেঁছে ও নলি বসিয়ে রস সংগ্রহ করে। পৌষ ও মাঘ মাস গাছ থেকে রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন তারা। তাছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিরার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুর করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে শীতের মৌসুম অতি প্রিয় হয়ে উঠেছে। গাছিরা খেজুরের গুড় তৈরি করে কলাপাড়ার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ১২৫/১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। তবে, বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি কেজি তরল খেজুর রসের দাম ২৫ টাকা এবং খেজুর মিঠাইয়ের মূল্য ১৩৫ টাকা। তারা প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে যে অর্থ যোগায় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

লালুয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া গ্রামের গাছি মো:আবদুল খালেক সিকদার, ছোনখোলা গ্রামের গাছি বাহাদুর, জহিরুল তালুকদার জানান, গাছ কাটার কাজ কষ্টের হলেও রস সংগ্রহে মজা রয়েছে। খেজুর গুড় গাছের মালিককে দেয়ার পর এবং নিজের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বিক্রি করে যে অর্থ আসে তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোই চলে। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে খেজুর রস বেশি পাওয়া যায় এবং রস আরও বেশি মিষ্টি হবে সেই সঙ্গে গুড়ও ভাল হবে। লালুয়া ইউনিয়নের এক ব্যাক্তি বলেন, খেজুরের গুড় তৈরিতে কোন প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।শিশুদের মেধা বিকাশে খেজুরের রস এবং গুড় অতুলনীয়। পিঠা, পুলি, পায়েশ, মুড়ি ও চিরার মোয়া তৈরিতে গ্রাম বাংলায় খেজুরের গুড় ব্যবহার হয়ে আসছে।ধানখালী ইউনিয়নের খেজুর গাছি ষাটোর্ধ্ব রহমান মিয়া জানান, খেজুর গুড়ের চাহিদা অনেক এখন তো গাছই নেই। তাই রসও কম হয়।

একই এলাকার আরেক গাছি ফজলু মুন্সী জানান, যে হারে ইটভাটা বাড়ছে, তাতে খেজুর গাছ না থাকারই কথা, আর কয়েক বছর অতিবাহিত হলে নতুন প্রজন্ম জানবেই না যে, খেজুর গাছ বলতে কিছু ছিল।যুগের পরিবর্তনে মানুষ একদিকে যেমন আধুনিক হচ্ছে। অন্যদিকে, অতীত ঐতিহ্যকে ভূলে যাচ্ছে সুযোগ-সুবিধার আশায়। মানুষ মনে করে খেজুর গাছ রোপণ করলে আয় কম, বছরে একবার খেজুর রস আসে। কিন্তু, তারস্থানে যদি অন্য কোন গাছ লাগানো হয় তাহলে সেগাছের কাঠ ও ফল দু’টিই লাভ করা যায়।কলাপাড়া উপজেলায় অতীতের তুলনায় প্রায় ৯০ ভাগ খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার কারণে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন গাছীরা।
সাধারণত, খেজুরের রস দিয়ে খেজুর মিঠাই, সেমাই, ফিরনি, বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। আর এগুলো তৈরিতে বিকল্প হিসেবে বর্তমানে চিনি ব্যবহার করা যায় বলে বিলুপ্ত হচ্ছে খেজুররস। এতে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম (ঈধ), ম্যাঙ্গানিজ (গহ), ম্যাগনেসিয়াম (গম), সালফার (ঝ), আয়রন (ঋব), পটাশিয়াম (কধ) এবং শর্করা, আমিষ ও পলিক এসিড। যা মানবদেহের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কালের পরিক্রমায় দিন দিন মানুষের চাহিদা অন্যরকম হওয়াতে কমেই চলছে খেজুর গাছের সংখ্যা।
কলাপাড়া উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, আমরা কৃষকদের খেজুর গাছের বীজ রোপণে উৎসাহিত করি। বন বিভাগের খেজুর রোপণে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেই।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, খেজুর গাছ জন্মানোর জন্য যে মাটি প্রয়োজন, সে মাটি এখন আর নেই। এছাড়া খেজুর গাছের চেয়ে অন্য ফল গাছ রোপণে কৃষকদের লাভ বেশি হয়। তাই এখন আর কেউ খেজুর গাছ রোপণ করেন না। তবে, সরকারিভাবে পতিত জমিতে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।


নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019 pirojpursomoy.com
Design By Rana