বৃহস্পতিবার, ০১ Jun ২০২৩, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
ইংরেজি নববর্ষ বরণ ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফাটানো এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে গানের আসর বসানোকে কেন্দ্র করে সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি ক্ষণিকের জন্যে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে। এতে রোগীদের কোনো সমস্যা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের বহির্বিভাগের সামনে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গান-বাজনা ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ও পিঠা উৎসবের আয়োজন চলে। এর ফলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়েন।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী, অনুষ্ঠান করার জন্যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কিছু্ই জানায়নি।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন ও চিকিৎসকদের চিত্তবিনোদনের জন্য গান-বাজনার আসর, সহ সার্বিক অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিলেন হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল। অনুষ্ঠানে হাসপাতালের চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে তারা গানের পাশাপাশি আতশবাজির আওয়াজ আর ঝলকানির মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন করেন।
হাসপাতাল চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মো. আবু সাঈদ। চিকিৎসকদের এমন আয়োজনে রোগীর দুর্ভোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে এমন আয়োজনকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মমিনুল বাবু নামে একজন লিখেন, ওষুধ কোম্পানী তাদের জন্য অনেক কিছুই করে শুনেছি। এবার রিফ্রেশমেন্টের আয়োজনও করে দিলেন, যা আমাদের দেখার বাকি ছিল। মো. মাসুদ পারভেজ নামে আরেক জন লিখেন মনুষ্যত্বহীন ডাক্তার। এবার বুঝেন, আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসিন্দারা কেমন সেবা পাইতেছি? দেখার যেন কেউ নেই। অথচ জেলা পুলিশ মাইকিং করেছে যেন কনসার্ট না করে। এম এইচ বাবুল রহমান বলেন, এইটা সুস্পষ্ট আইনের লংঘন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী বলেন, এটা কান্ডজ্ঞানহীন কারবার। এমন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী স্তম্ভিত। তিনি ঘটনার জন্যে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। পাপাশি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে অনুষ্ঠানটির স্পন্সরের ব্যাপারে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সদর হাসপাতালের আয়োজনে অনুষ্ঠান ছিল। আমাদের কোম্পানীর পক্ষ থেকে শুধু স্পন্সর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন বলেন, সবাই অনুষ্ঠান করে ‘চিকিৎসকরা তো মানুষ। তাদেরও রিফ্রেশমেন্ট বা চিত্ত বিনোদনের প্রয়োজন আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নতুন একদল চিকিৎসক যোগদান করেছে। তারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে। আমাদের দাওয়াত দিয়েছে। আমরা কেবল অংশ গ্রহন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপত্তি আসার পর তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, অনুষ্ঠানের ধরণ সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। অনুষ্ঠান স্থলে পৌছে দ্রুত আয়োজকদের অনুষ্ঠান শেষ করার তাগিদ দেই।
আতশবাজি আর সঙ্গীতানুষ্ঠানের কারণে রোগীদের কোনে সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের দক্ষিন দিকের যে ফটক এটি দুপুর আড়াইটার পর বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে রোগীর কোনো বেডনেই।
তাই তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। হাসপাতালের ভেতর অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছিল কিনা জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। হাসপাতালে অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে অনুষ্ঠানটি দ্রুত বন্ধ করতে বলা হয়। পরে তারা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হন।