মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন
এবার পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ১৩ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর সবুজবাগ থানার সোর্স মো. তুষার এবং মাদকাসক্ত যুবক রিফাত ও সজীবের বিরুদ্ধে। অভিযু্ক্ত ৩ জনই গ্রেপ্তারের পর এখন কারাগারে আছে।
ভুক্তভোগী কিশোরী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে কোনো পুরুষ দেখলেই আঁতকে উঠছে বলে জানা গেছে।
মেয়েটির স্বজনরা বলছেন, ১ জানুয়ারির এই ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার মা থানায় মামলা করতে গেলে তাদের ২৪ ঘণ্টা সেখানে বসিয়ে রাখার পর মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি করেছেন কিশোরীর মা।
ভুক্তভোগী মেয়েটির বরাত দিয়ে তার মা গণমাধ্যমকে জানান, তার স্বামী পেশায় রিকশাচালক। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি। ফল আনতে ১ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে স্কুলে গিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় কম্পিউটারের দোকান থেকে পরীক্ষার ফল উঠিয়ে সে বাসায় ফিরছিল। পথে পূর্বপরিচিত তরুণ রিফাত তার ফল দেখতে চায়। কার্ড হাতে পেয়েই রিফাত মেয়েটিকে শর্ত দেয়- তার সঙ্গে ঘুরতে গেলে তবেই ফেরত দেওয়া হবে রেজাল্ট কার্ড। অনেক অনুরোধ করেও কাজ না হওয়ায় রিফাতের শর্তে রাজি হয় মেয়েটি।
‘তারপর মাদারটেকের আদর্শপাড়ায় গিয়ে মেয়েটিকে গ্লাসে কেরে সেভেন-আপ দেয় রিফাত। ওই পানীয় পান করার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মেয়েটি। প্রায় অচেতন অবস্থায় একটি বাড়িতে নিয়ে যায় রিফাত। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। রাত ৮টার দিকে কিছুটা চেতনা ফিরে এলে মেয়েটিকে ওই এলাকারই আরেকটি বাসায় রেখে চলে যায় রিফাত। ওই বাসার এক তরুণী পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে বোরকা পরিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। কিন্তু পানীয়তে মেশানো নেশাজাতীয় দ্রব্যের ঘোর না কাটায় বেশিদূর যেতে পারেনি মেয়েটি। এরই মধ্যে রাস্তায় হঠাৎ পেছন থেকে তাকে টেনে ধরে রিফাত। তারপর রাত ৩টার দিকে নতুনপাড়া পাওয়ার হাউসের মাঠের কাছে টহল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রিফাত ও মেয়েটি। এ সময়ও ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু করছিল তার।’
মেয়েটির মা আরও জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মাঝেই সোর্স তুষার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কিছু একটা বলে। এরপর পুলিশ মেয়েটিকে থানায় না নিয়ে অথবা অভিভাবকদের জিম্মায় না দিয়ে তুলে দেয় তুষারের হাতে। পুলিশের হাত থেকে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে সোর্স তুষার ও রিফাত অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝিলের পাশে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী হিন্দুপাড়ার একটি টিনের ঘরে নিয়ে যায় তুষার, রিফাত ও সজীব। সেখানে পালাক্রমে চালানো ধর্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মেয়েটি। ভোরে নিজেকে সে আবিষ্কার করে ঘটনাস্থলের পাশেই একটি মাঠে, একা। একপর্যায়ে স্থানীয় এক নারী তার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখতে পেয়ে নিয়ে যায় নিজ বাসায়।
এদিকে মেয়ে রাতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন তার মা-বাবা। তারপর ভুক্তভোগীর এক বান্ধবী জানায়, মেয়েটিকে ১ জানুয়ারি দুপুরে রিফাতের সঙ্গে যেতে দেখেছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে রিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন স্থানীয়রা। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও মারধর শুরু হলে সে সব বলে দেয়। তাকে সঙ্গে নিয়েই হিন্দুপাড়ার ওই নারীর বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
এরপর মেয়েটিকে নিয়ে ওর মা সবুজবাগ থানায় যান আইনি পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু থানার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটির চিকিৎসার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু ভুক্তভোগী ও তার মাকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বসিয়ে রাখা হয়। পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে মেয়েটিকে ওসিসিতে পাঠায় পুলিশ। তারপর রিফাতের দেওয়া তথ্যানুসারে সোর্স তুষার ও মাদকাসক্ত যুবক সজীবকে আটক করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার এসআই মো. বোরহান মিয়া বলেন, তুষার পুলিশের লিস্টেড সোর্স না। তবে তথ্য দিয়ে সহায়তা করত বলে জানতে পেরেছি। ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রিফাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
সুত্র বাংলাদেশ জার্নাল