শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন
মায়ের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করছিলেন মেয়ে রবিনা। বৃদ্ধা মা এখন ভাল করে হাঁটতে পারেন না। বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি। চোখের দৃষ্টিও আর আগের চেয়ে অনেক ঝাপসা। জিজ্ঞেস করলেন মায়ের কী ভাল লাগে করতে? এতটা বছর পার করার পরে জীবনটাকে কী ভাবে দেখেন, এইসব নিয়ে কথা এগোচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গেই মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়ে, তাঁর জীবনে কোনও আক্ষেপ রয়েছে কি না!
উত্তরে মা জানালেন, জীবনে কখনও উপার্জন করতে পারলেন না তিনি। সে দিনের সেই গল্প সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মায়ের কাছে। কিন্তু মেয়ের কাছে সেটা শেষ ছিল না। বরং ছিল মায়ের জন্য এক নতুন জীবন শুরুর অনুপ্রেরণা। ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা এই মা ও মেয়ে। বৃদ্ধার নাম হরভজন কৌর আর তাঁর মেয়ে রবিনা। মেয়ের কাছেই থাকেন তিনি। মেয়ে-জামাই-নাতনিকে ঘিরেই এখন তাঁর পরিবার। মায়ের আক্ষেপের কথা জানার পর থেকেই রবিনা স্থির করে ফেলেছিলেন মায়ের জন্য কিছু করতে হবে। ছোটবেলায় তিনি দেখতেন, বাড়ির সকলেই মায়ের রান্নার প্রশংসা করতেন ভীষণ। রবিনা বলেন, বাড়িতে যে কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠানে দোকান থেকে কখনও মিষ্টি আসত না। বাড়িতেই সকলের জন্য মিষ্টি বানাতেন মা। নানারকম সুস্বাদু আচারও বানাতেন তিনি।
অতীতের স্মৃতিচারণ করে রবিনা বলতে থাকেন, সে সময় মা ভীষণ লাজুক ছিলেন। তাঁর রান্না খেয়ে অতিথিরা প্রশংসা করতেন, অথচ মা লজ্জায় কখনও তাঁদের সামনে আসতেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় ওই রান্নাঘরেই কাটাতেন। আজ থেকে চার বছর আগে রবিনা মাকে গিয়ে তাঁর নিজের স্টার্ট আপ শুরুর প্রস্তাব রাখেন। এই বয়সে এসে ব্যবসা! প্রথমে ভাবতেই পারছিলেন না হরভজন কৌর। পরে নাতনি এবং মেয়ে রবিনার জোরাজুরিতে ওই ৯০ বছর বয়সেই তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করলেন। প্রথমে একদিন বেসনের বরফি আর নানা রকম আচার বানিয়ে কাছের একটি অর্গানিক বাজারে গিয়ে বিক্রি করেছিলেন। অবাক করা বিষয় হল প্রথম দিনেই সবটা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরেছিলেন হাতে ২০০০ টাকা নিয়ে। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম উপার্জন।
মায়ের এমন আত্মতৃপ্তিতে খুশি রবিনা। জানালেন ওই প্রথম মায়ের চোখে মুখে ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখেছিলেন তিনি। তারপর থেকে আর মেয়ে আর নাতনিকে জোর করতে হয়নি, নিজেই কাস্টমারদের থেকে অর্ডার নিতেন, বেসনের বরফি বানিয়ে দোকানে পাঠিয়ে দিতেন। নাতনি তাঁর প্যাকিংয়ের কাজ করে। বর্তমানে ৯৪ বছর বয়স হরভজন কৌরের। গত চার বছর ধরে একই রকম উৎসাহ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর এক কেজি বেসনের বরফির দাম ৮৫০ টাকা। মিষ্টির বাক্সের ট্যাগলাইন ‘হরভজন’স.. বচপন ইয়াদ আজায়ে’ এই চার বছরে মোট ৫০০ কেজি বরফি বিক্রি করেছেন তিনি। নাতনির বিয়েতেও নিজের হাতে মিষ্টি বানিয়ে অতিথিদের খাইয়েছেন হরভজন।