শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
খায়রুল আলম রফিক বিশেষ প্রতিনিধি
জেলার ত্রিশাল, গফরগাঁও ও ভালুকায় মাদকসেবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। অধিক মুনাফার লোভে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। এদের মধ্যে অনেকেই এক সময় ছিল হতদরিদ্র। মাদক ব্যবসার কারণে তারা এখন কোটিপতি। সরকার দলীয় ছাত্রলীগের নেতারাও রয়েছে এব্যবসায় । যদিও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ ময়মনসিংহ সদর উপজেলাসহ বাকী উপজেলাগুলিতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকায় উপরোক্ত ৩ উপজেলায় মাদক কারবারিরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে, উপরোক্ত উপজেলাগুলিতেও পুলিশী অভিযান রয়েছে। শতাদিক মাদক ব্যবসায়ী ডিবির হাতে গ্রেফতারও হয়েছে । অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় ইয়াবার আগ্রাসন। ইয়াবার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত উপজেলাগুলির ছাত্র ও যুব সমাজ বিশেষ করে ত্রিশালে ইয়াবার আগ্রাসন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং ছাত্র ও যুবকসহ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ এই আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ তথা সারাদেশে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে । বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা নগদ অর্থে ঘুষের বিনিময়ে সেগুলো সীমান্ত পার হয়ে বিভিন্ন জেলা ঘুরে ময়মনসিংহের ভেতরে চলে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাতারাতি পৌঁছে যাচ্ছে খোলা বাজারে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তিনটি উপজেলা শহর থেকে গ্রামের হাট-বাজারে পর্যন্ত গোপনে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা।
জেলার ত্রিশাল উপজেলার ঘুরে এবং গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ত্রিশালে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে । থানা পুলিশের দৃশ্যমান অভিযান নেই বললেই চলে । তবে, ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে চুনোপুটি, ধরা পড়লেও গডফাদাররা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে । গত বছরের ডিসেম্বরে ইয়াবা ব্যবসায়ী ত্রিশালের বীররামপুরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানকে ডিবি পুলিশ কুমিল্লার বর্ডার এলাকা থেকে ইয়াবা পাচারকালে ২৫শ’ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে ।অভিযোগ রয়েছে, তার সাঙ্গপাঙ্গরা এখনও ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে । সম্প্রতি মঠবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম রুবলকে ৬ হাজার ৪৫০ পিস ইয়াবাসহ ঢাকা ডিবি পুলিশ আটক করলেও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ও গডফাদাররা মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
ইয়াবা ব্যবসা করে তারা এখন কোটি টাকার মালিক । ভালুকা ও গফরগাঁওয়ে রয়েছে তাদের বড় সিন্ডিকেট । কিছু অসাধু পুলিশের সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক। সম্ভবত সে কারণেই তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। গ্রেফতারের নামে নাটকও নাকি তাদের উদ্যোগেই সাজানো হয়। এজন্যই বড় কোনো ব্যবসায়ীর কখনো শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায় না।
বিষয়টি অনেক পুরনো এবং সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে বিশেষ করে ইয়াবার ব্যাপক চোরাচালানের পরিপ্রেক্ষিতে। ইদানীং ক’দিন পরপরই চোরাচালানের অবৈধ পথে দেশে আনা ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। সংখ্যা বা পরিমাণের দিক থেকে এসব চালান চমকে ওঠার মতো। সময়ে সময়ে অভিযান চালানো হলেও এবং চুনোপুঁটি ধরনের দু’চারজন ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা ধরা পড়া সত্ত্বেও চোরাচালানীরা কিন্তু থেমে নেই। স্থানীয় কতিপয় ছাত্রলীগের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের আত্মীয়স্বজনসহ অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসায়ি ও ছাত্রনেতার তমকা লাগানোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এদের ভয়ে তটস্থ থাকে। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে নির্বিঘে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, গোয়েন্দা পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে । আটক করা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের । আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গডফাদারদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে । তিনি ময়মনসিংহের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মোবাইল ও ডাকযোগে ইয়াবা তথা মাদক কারবারিদের বিষয়ে তথ্য জানাতে ডিবি পুলিশকে ডাকযোগে ও মোবাইলে মাদক কারবারিদের নাম জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আহামার উজ্জামান জানান, ২ মাস আগে ময়মনসিংহে যোগদান করেছি । শহর থেকে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেছি । মাদক সেবীদের আগে ধরছি । আটকদের জিঞ্জাসাবাদ করে মাদককারবারি গডফাদারদের ধরা হবে । যেকোন মূল্যে ময়মনসিংহ থেকে মাদক নির্মুল করা হবে এটা আমার চ্যালেঞ্জ।