বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
করোনার লাইগা মাইনষের বাইত্তে যাওন যায় না। কী খামু! কিবায় বাঁচমু! দু’চোখের পানি ঝরছিল আর কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের আকন্দের বাইদ গ্রামের বাসিন্দা রূপভানু (৬৬) স্বামী শামছুল হক। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন তারা।
রূপভানু আরও বলেন, ‘আমাগো কিছুই নাই। পোলার বাপটাও মেলাদিন ধইরা পইড়া আছে। আমি মাইনষের বাইত্তে চাইয়া খাই। অহন দেশে যে কী আইলো।
মাইনষের বাইত্তেও যাওন যায় না। না খাইয়া কয়দিন থাকমু?
মাইনষেরে কতকিছু দেয়।
আমরা সরকারের কিচ্ছুই পাইলাম না। রূপভানুর এক ছেলে তিন মেয়ে।
ছেলে আলাদা। দিন মজুরি করে সংসার চালায়। এক মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে এখানেই থাকেন। কখনো এই বাড়ি কখনো ওই বাড়ি কাজ করে দু’মুঠো খেয়ে জীবন বাঁচে। পাঁচজনের পরিবার। করোনা ছোবল থেকে বাঁচতে সবাই ঘরবন্দি হলে এই পরিবারটি চরম বিপাকে পড়ে। যেন হাত পাতার মতো লোকও পাচ্ছে না তারা। একই গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ বানু (৫৫) স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মা জায়মন নেছা (৮০)কে নিয়ে কোন রকম ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে থাকেন। দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। মোছাঃ বানু খুব আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার মা ডা অসুখ। মেলা আগে স্বামী মরছে।অহন মাইনষের বাইত্তে বাইত্তে চাইয়া খাই।-আমার কোন ছেলে সন্তান নাই।অহনো সরকারী কিছুই পাই নাই। চেয়ারম্যান-মেম্বরের কাছে চাইলে কয় পরে আইয়ো অহন নাই। ভোটের সুময় কত লোক আহে, অহন ভোট শেষ কাউরে দেহি না। যাগোর আছে তাগোরে সাহায্য দেয়।আমরা সরকারের কিচ্ছুই পাইলাম না।’বিধবা মোছাঃ বানু আজও পায়নি কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা। এই চরম সংকটে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।একই ইউনিয়নের বেইলা গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ রতি(৬০), হাছি(৫৫), ছুরু(৬০), মিশিরন(৬০) ও রাবেয়ার(৬২) মতো অনেক হতদরিদ্র কর্মহীন মানুষ করুন অবস্থায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। কেউ পায়নি সরকারী ত্রাণ সহায়তা। পায়নি কোন ভাতা কার্ড। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
বেইলা হাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মেম্বাররে কত কইলাম কাউরে কিছু কইরা দিলো না। একটা চাইলের (চাউলের) কার্ড কইরা দিতে তাও দিলো না।
-আমরা কিছুই পাইনা।’
সরজমিনে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গেলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে ধরেন গ্রামের হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষ।
লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বেইলা ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ওয়ার্ডে হতদরিদ্রের সংখ্যা বেশি। দেখে দেখে গরীব ও অসহায়দের ত্রাণ দিচ্ছি।তবে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ব্যাপারে অস্বীকার করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান একাব্বর আলী বলেন, এলাকার লোকজন ডেকে সবচেয়ে গরিব লোকদের মাঝে এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সুত্র মানবজমিন