রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
বর্তমান করোনা ভাইরাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ত্রাণের ছড়াছড়ি গেলেও একটি কিডনি নিয়ে সংসারের ঘানি টানা বিধবা ফেরদৌসি বেগম (৪২) আজ পর্যন্ত কোন ত্রাণের মুখ দেখেননি। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী বাজার সংলগ্ন টিনের জীর্ণ কুটিরে ২ ছেলে নিয়ে ফেদৌসির সংসার।
ফেরদৌসির স্বামী মোঃ জাফর খাঁ মিরুখালী ইউনিয়নের ছোট হারজী গ্রামের মোঃ আমজেদ খাঁর ছেলে। জাফর মিরুখালী বাজারে পরাটা, সিংগারা ও পুরি বিক্রি করে সংসার চালাত। ২০১২ সালে জাফর অসুস্থ হলে ধরা পরে তার ২টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জড়িত জাফর কোথায় পাবে কিডনি সংগ্রহের টাকা। স্বামীকে বাচাঁবার জন্য স্ত্রী ফেরদৌসী নিজের জীবন বাজী রেখে ১টি কিডনি দান করে। তারপরও ফেরদৌসীর শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী এবং সন্তান রেখে জাফর চলে যায় পরপারে। স্বামীর মৃত্যুর ৬ মাস পর জন্ম নেয় ছোট ছেলে।
স্বামীর রেখে যাওয়া সাড়ে ৬ শতক জমিতে ছাপড়া ঘরে ৩ সন্তান নিয়ে শুরু হয় ফেরদৌসীর জীবন সংগ্রাম। সম্বল বলতে একটি সেলাই মেশিন। জামা-কাপড় সেলাই করে মাসে আয় দেড় থেকে ২ হাজার টাকা এবং আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য ছাড়া আর কোন আয় নাই। রড় মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন তাদের ৩ জনের সংসার।
ফেরদৌসীর একটি কিডনি তাই প্রতি বছর এক বার ঢাকা গিয়ে চেকআপে ১০/১২ টাকা খরচ হয়। তারপর নিয়মিত চিকিৎসা খরচ ও ২ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনভাবে চলে তার সংসার।
অসহায় ফেরদৌসীর খবর পেয়ে এই প্রতিনিধিসহ “জেনিচেরি কমিউনিটির” সদস্যরা বৃহষ্পতিবার সকালে ইফতার সহায়তা নিয়ে হাজির হয় তার ঘরে। ইফতার সহায়তা পেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে ফেরদৌসী জানান করোনায় এই ইফতার ছাড়া আর কিছুই সে পায়নি। আজ পর্যন্ত কেউ তাদের খবরও নেয়নি। ফেরদৌসী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিধবা ভাতা ছাড়া আর কিছুই সে পায় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি জানার পর বিধবা ফেরদৌসীর নাম তালিকাভূক্ত করেছি। এরপর কোন সহায়তা আসলে তাকে দেয়া হবে।