সোমবার, ০৮ অগাস্ট ২০২২, ০৫:০৮ অপরাহ্ন
দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র বৃহৎ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬৪ জন চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালের উপ-পরিচালকও রয়েছেন। অনেক চিকিৎসক ও নার্সের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগ লকডাউন করা হয়েছে। তথ্য গোপন করে এক রোগী ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসকসহ ১১ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হয়। এরপরই বিভাগটি লকডাউন ঘোষনা করে দায়িত্বরতদের আইসোলেশনে পাঠানো হয়। সবকিছু মিলিয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। কিভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা সচল রাখা হবে এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে এনিয়ে চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক এসএম বাকির হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ হাসপাতালের অবস্থা খুবই খারাপ। যেভাবে চিকিৎসক, নার্স আক্রান্ত হচ্ছে তাতে করে এক সপ্তাহের মধ্যে দেড়শ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একের পর এক করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। কয়েকদিন পর হাসপাতালই আইসিইউতে যাবে। কারণ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরাই যদি এভাবে একের পর এক আক্রান্ত হয় তাহলে কে কার সেবা দেবেন। আমারতো মনে হয় ২/১ দিন পরে হাসপাতালে তাবু টানাতে হবে।
বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা গতকাল এক হাজার ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার বিভাগে নতুন করে ৭০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল জেলায় ৫৭ জন। নতুন শনাক্ত ৭০ জন নিয়ে বিভাগে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৬৪।স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় এ নিয়ে জুনের প্রথম নয় দিনে (১ থেকে ৯ জুন) এই বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৫৬১ রোগী, যা মোট শনাক্তের ৫২ দশমিক ৭২ ভাগ। বিভাগের মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৬৪ রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল জেলায় ৬৭৪ জন। এর সিংহভাগই বরিশাল নগর এলাকার বাসিন্দা। এই সংখ্যা ৫৪৪ জন, যা বিভাগের মোট রোগীর ৫১ দশমিক ১২ ভাগ।
এ পর্যন্ত বিভাগে ২২ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে বরিশালে আটজন, পটুয়াখালী জেলায় পাঁচজন, পিরোজপুরে তিনজন, বরগুনায় দুজন, ঝালকাঠিতে দুজন এবং ভোলায় দুজন রোগী মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশালে করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। গত ৯ এপ্রিল বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ৩২ ও ৭০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর তাঁদের দুজনের নমুনা পরীক্ষা করোনা পজিটিভ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিভাগের প্রথম দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিভাগের ছয় জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৮৯। ৩১ এপ্রিল তা ১১৭ জনে দাঁড়ায়। এরপর মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২১৬ জনে। মে মাসের শেষ দুই সপ্তাহে, অর্থাৎ ৩০ মে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে হয় ৫৬০ জন। আর জুনের প্রথম ৯ দিনে তা ৫৬১ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৭০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা বরিশালে। এ জেলায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ৫৭ জন। এ নিয়ে এ জেলায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭৪। এ ছাড়া পিরোজপুরে নতুন তিনজনসহ ৯০ জন, বরগুনায় দুজনসহ আক্রান্ত ৮২ জন। পটুয়াখালীতে নতুন চার জনসহ মোট আক্রান্ত ৮২ জন। ঝালকাঠিতে নতুন দুজনসহ ৬৬ জন এবং ভোলায় দুজনসহ মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘গত ৯ দিনের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, বরিশাল বিভাগে আশঙ্কাজনক হারে কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে বরিশাল নগর করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। গোটা বিভাগের অর্ধেকের বেশি রোগী নগরের। ঈদের সময় বিপুলসংখ্যক লোকের বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়ি ফেরার কারণেও সংক্রমণ বাড়ছে। এটা প্রতিরোধে এখন কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। তবে এখনো আমরা লকডাউনের কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
সুত্র দৈনিক আজকের পরিবর্তন