বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন
জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি চাহিদা মতো ১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট না আনায় । অপহরণকারীর কথামতো জায়গায় শিশুটিকে আনতে যাওয়া ব্যক্তিকেও আটকে ফোন বন্ধ করে রাখা। শিশুটির খোঁজে অচেনা পথ চলতে চলতে গভীর রাতে নির্জনস্থানে চলে যাওয়া ব্যক্তির ফোনও বন্ধ। পুলিশ কিংবা অন্যরা কে কোথায় আছে সেটিও অপরাধী চক্র বলে ফেলা।
এভাবে প্রায় ঘণ্টা বিশেক রুদ্ধশ্বাস সময় কেটেছে শিশু সিফাতকে উদ্বার করতে যাওয়া লোকজনের। কারো চোখে ঘুম নেই। ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়াও নেই। সারারাত পেড়িয়ে পরদিন বিকেলে এলো সফলতা। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হলো ১৮ মাস বয়সি শিশু। এরপর আরো ঘণ্টা চারেক। বেশ কৌশলে গ্রেপ্তার করা হলো, অপহরণকারি ও তার এক সহযোগিকে। এ যেন পুলিশ জনতা,জনতাই পুলিশ স্লোগানের আসল পরিসমাপ্তি।
পুলিশ আর জনগণের চেষ্টায় উদ্ধার হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের শিশু শিফাত মোল্লা। একই সঙ্গে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে মূল অপহরণকারি মাদকাসক্ত ফারুক মিয়া (৪০) ও তার সহযোগি আনোয়ার হোসেন (৩০)। গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক নোয়াখালী জেলার চর জব্বার থানারর চর কাজী মোখলেছ এলাকার আব্দুস সহিদের ছেলে ও আনোয়ার হোসেন একই থানা এলাকার থানারহাটের নূর নবীর ছেলে। তবে ফারুক সুধারাম থানার ধর্মপুরে বাসাভাড়ায় থাকে। আখাউড়ার দেবগ্রামে ও কয়েকমাস ধরে ভাড়ায় থাকতো। ফারুক মাদকাসক্ত ছিল বলে স্থানীয় একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। গ্রেফতার হওয়া দুজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং শিশুটিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেলে আখাউড়া থানায় হওয়া এক সংবাদ সম্মেলনে আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রসুল আহমেদ নিজামী উদ্ধার অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, স্থানীয় পুলিশ ও এলাকার লোকজন উদ্ধার কাজে বেশ সহযোগিতা করেছেন। উদ্ধার অভিযানে সরাসরি নেতৃত্ব নেয় আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ হাবিবুর রহমান
উল্লেখ্য, গত রবিবার আখাউড়ার দেবগ্রামের ভাড়া বাসা থেকে শিফাতকে নিয়ে যায় একই বাড়ির ভাড়াটিয়া ফারুক ও তার স্ত্রী রূপা বেগম।
বিষয়টি আখাউড়া থানা পুলিশ কেঅবহিত করা হয়।অপহরনকারী ফারুকের কথামত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এলাকার একটি দোকানে ঔ টাকা পাঠানো হলে, সেটি না নিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন। তারই কারনে আখাউড়া থানা পুলিশ,শিফাতের বাবা ও তারচাচা সোনাইমুড়ীতে যান।ফারুকের পরিচিত মোখলেস কে ও সাথে করে নিয়ে যাওয়া হয়। মোখলেস কে পাঠালে শিশু সিফাত কে দিয়ে দেওয়া হবে বলে ফারুক জানায়।
থানার বরাত দিয়ে রিপন জানায়, সোমবার রাতে ১০টার সময় পৌছে অপহরণ কারীর কথামতো একেক সময় একেক জায়গায় পাঠানো হয় মোখলেস কে। রাতে মোখলেস,শিফাতের বাবা ও আমি একেক জন একেক দিকে ছুটতে থাকি।পুলিশ ও নিজেদের মতো করে মোবাইল ট্র্যাকিং করে খোঁজা খুঁজি শুরু করে।আমরা মোট ৫টি মোবাইল সেট কনফারেন্সে করে লাইন দিয়ে রাখি,যেন যে কোন মূহুর্তে যে কোন কথা শুনতে পাই।এক পর্যায়ে আমি নির্জন স্থানে চলে যায় ও ফোন ও বন্ধ হয়ে যায়।মঙ্গলবার সকালে সবাই আমরা একত্রিত হই। শিফাতের বাবা অপহরণ কারীকে ফোন করলে জানায় এক হাজার টাকা ও ১০টি ইয়াবা টেবলেট দিলে শিশুটিকে দিয়ে দিবে মোখলেসের কাছে।কথামতো মোখলেস সেখানে গেলে টাকা ও।ইয়াবা না আনায় গালাগালি শুরু করে।শিশুটিকে হত্যা করা হবে বলেও জানানো হয়। এক পর্যায়ে মোখলেসের ফোন বন্ধ করে দেয়। বলা হয় অন্যান্য লোকজন ও পুলিশ কেন সাথে আছে।কিছুক্ষণ পর আমার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে একটি বিকাশ নম্বর দেই।ওই ফোন নম্বরটি ইমুতে সেভ করতেই ছবি ভেসে উঠে।ওই ছবির সুত্র ধরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় ওই বিকাশ নম্বরদারীকে প্রথমে আটক করা হয়।এরপর বিকাশ নম্বরধারী আনোয়ারের সঙ্গে ফারুককে যোগাযোগ করিয়ে প্রথমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় ও পরে ফারুক কে গ্রেফতার করা হয়।
এস,আই হাবিবুর রহমান বলেন,মোখলেস কে ফারুকের কাছে পাঠানোর পর শিশুটিকে হত্যা করার হুমকি দিলে আমরা ঘাবড়ে যাই। পরে মোখলেসের ফোন বন্ধ হয়ে গেলে চিন্তা আরো বেড়ে যায়।তবে শেষ পর্যন্ত সেখানকার পুলিশ ওস্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাদের উদ্বার অভিযান সফল হয়েছে।
শিশু সন্তান শিফাতকে নিয়েই থানায় বসেছিলেন তার বাবা-মা। শিফাত একবার তার বাবার কুলে আরেকবার তার মায়ের কুলে যাচ্ছিলেন। বাবা-মাকে কাছে পেয়ে শিশুটি যেন আনন্দে আত্বহারা সেই সাথে তার বাবা মা ও যেন খুশিতে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন। তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।