বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
প্রায় এক মাস আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণার পর এবার উপসাগরীয় রাষ্ট্র বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, এই দুটি দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার “ঐতিহাসিক” এক চুক্তি করেছে।
“তিরিশ দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় আরব দেশ, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করল,” টুইট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ইসা বিন সালমান আল-খালিফার মধ্যে এই চুক্তি হয়।
আমিরাতের আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে মিশর ও জর্ডান। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে এখন চারটি আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিল।
বিশ্লেষকদের নজর এখন সৌদি আরবের দিকে
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশ এখন কী অবস্থান নেয় সেদিকে নজর রাখছেন বিশ্লেষকরা।
কয়েক দশক ধরে অধিকাংশ আরব দেশ ইসরায়েলকে বয়কট করে এসেছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে ফিলিস্তিনি বিবাদের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
এখন একের পর এক আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
সৌদি আরবের অবস্থান কী?
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মিত্র দেশ সৌদি আরব যদিও এখনও এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি, কিন্তু সৌদিরাও একই পথ অনুসরণ করবে কিনা সেদিকে নজর রাখছে আরব বিশ্বও।
মধ্যপ্রাচ্য ও ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক খান। তিনি বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করা সৌদি আরবের জন্য তার মতে এখন “শুধু সময়ের ব্যাপার”।
তিনি বলছেন সৌদি আরবে দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট ক্রমশ বাড়ছে।
“সৌদি আরব জানে তেল আজীবন থাকবে না, থাকলেও তেলের বাজার মূল্য কমবে। তেলের ওপর নির্ভর করে রাজত্ব চালানো যাবে না। দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যাও বাড়ছে।”
ড. খান বলছেন, অর্থনীতি সচল ও শক্তিশালী রাখতে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তা সৌদি আরব অনুভব করছে।
পাশাপাশি, তার মতে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করার ঘটনা নিয়ে বেকায়দায় ছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ।
“জামাল খাসোগজির হত্যার পর সৌদি নেতৃত্ব বেশ খারাপ অবস্থানে ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে একটা বোঝাপড়ায় পৌঁছে থাকতে পারে,” বলছেন ড. খান।
এছাড়াও, ইরান ও মধ্য প্রাচ্যে তার মিত্র দেশগুলোর যে “অক্ষ-শক্তি” তৈরি হচ্ছে তাতে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সাম্প্রতিক কালে বেড়েছে। সেখানেও সৌদি আরব আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা পেতে চাইছে।
“মধ্য প্রাচ্যে ইরানের সাথে সিরিয়া, ইরাক সেইসাথে লেবানন, তুরস্ক ও সম্ভবত কাতারের যে আঁতাত সম্প্রতি গড়ে উঠেছে, তাকে একটা নতুন ‘অক্ষ শক্তি’ এবং নিজেদের জন্য একটা বড় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হিসাবে দেখছে সৌদি আরব।”
ড. খান বলছেন, ওই দেশগুলোর অর্থনীতি যেহেতু শুধু তেল-নির্ভর নয়, সেটাও সৌদি আরবের জন্য দুশ্চিন্তার আর একটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমেরিকার সমর্থনের জন্য ইসরায়েলের সাথে একটা সমঝোতায় আসার ঘোষণা দেয়া এখন তাদের জন্য “শুধু সময়ের ব্যাপার” বলে তিনি মনে করছেন।
সৌদি আরব ও ইরান দ্বন্দ্ব
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ওই অঞ্চলে গত কয়েক দশকে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও শক্তি বাড়ায় উদ্বিগ্ন সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে গত কয়েক বছর ধরে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরব এক ধরনের সখ্যতা গড়ে তুলেছে বলছেন বিবিসির সংবাদদাতা।
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ধর্মীয় আদর্শগত পার্থক্য দু দেশের কয়েক দশক-ব্যাপী বৈরিতায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহারাইন সৌদি আরবের মিত্র। তারাও শিয়া মতাবলম্বী ইরান সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথা ইসরায়েলের কাছে বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমিরাত ও বাহরাইনের যোগাযোগও বেড়েছে।
সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরইনের পথ অনুসরণ করে একইধরনের চুক্তির ঘোষণা দেয় কিনা সেটা বিশ্লেষকরা মনে করছেন এলাকার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।