সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে অবশেষে নিজেই ফেঁসে গেলেন রিটন মিয়া। উপজেলার মাস্কা ইউনিয়নের পানগাঁও গ্রামের রিটন মিয়া ওরফে লিটন মিয়া তার স্ত্রী রহিমাকে হত্যা করে এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ২০১৬ সালে ২৯শে ডিসেম্বর। ৪ বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে মামলার বাদী ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোর্পদ করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্য এ ঘটনায় বাদীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পিবিআই, সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত শেষে গত ১০ই ফেব্রুয়ারি আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রহিমা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কেন্দুয়া সার্কেল এএসপিকে দায়িত্ব দেন। কেন্দুয়া সার্কেলে দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ১৬ই ফেব্রুয়ারি মামলার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন যেতেই বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার কবলে পড়ে দেশ।প্রকাশ্যে ও গোপনে অনুসন্ধান শুরু করলে পূর্বের ৩টি প্রতিবেদন এবং বাদীর বক্তব্যের প্রতি সন্দেহ হয় এএসপি’র। স্থানীয়দের ভাষ্য আর ৩ সংস্থার প্রতিবেদনের মিলও পাচ্ছিলেন না তিনি। বাদী রিটনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। গত ৮ই আগস্ট এ হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত রিটন মিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এএসপি মাহমুদুল হাসান। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, রহিমার হত্যা মামলার বাদী স্বামী রিটন মিয়া জন্মসূত্রে পানগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নন। তিনি নানার বাড়িতে বসবাস করতেন। নিহত রহিমা ছিলেন রিটনের দ্বিতীয় স্ত্রী। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়িতে রিটন মিয়া তার স্ত্রী রহিমা, ছেলে আসাদুল ও আতাউরকে নিয়ে শাবল, কোদালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জমির আইল ভাঙার জন্য বকতে বকতে জমির আইলের দিকে যায়। রিটনের বকাবকির শব্দ পেয়ে নাজমুলের ছেলে রতন ঘটনাস্থলে যেতেই তার ওপর হামলা চালায় রিটন গংরা। এক পর্যায়ে রতন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ছেলের চিৎকার শুনে নাজমুল ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় রতনের মা দৌড়ে গিয়ে রক্তাক্ত ছেলেকে দেখে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে চিৎকার করতে থাকলে রিটন মিয়ার বুদ্ধিদাতা সবুজ মেম্বার লাইট মেরে রতনের অবস্থা দেখে রিটন মিয়াকে লক্ষ্য করে বলে‘ তুই তো মার্ডার কইরা লাইছচ’ রতন কিন্তু মইরা যাইতাছেগা, তুই কিতা করবি তাড়াতাড়ি কর’। এরপরই রিটন তার হাতে থাকা শাবল দিয়ে স্ত্রী রহিমাকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে জহুরা নামে এক মহিলা সবুজ মেম্বারকে লক্ষ্য করে বলে যে, কি গো সবুজ মেম্বার, দেহনা রিটন যে, হের (তার) বউরে শাবল দিয়ে মাইরা লাইতাছে, তুমি ফিরাওনা? এই কথা বলতেই জহুরাকে সবুজ মেম্বার বাড়ি মারলে জহুরা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় অন্যরাও রহিমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদেরও আঘাত করে। এ সময় রিটনের ছেলে আসাদুল ও আতাউর তার মাকে বাঁচানো চেষ্টা করলে তাদেরকেও রেহাই দেয়নি। মোহন, সুমন ও আলম তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় রিটনের উপর্যুপরি আঘাতে এক সময় স্ত্রী রহিমা নিস্তেজ হয়ে পড়লে আবার তারা রহিমাকে কেন্দুয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে রহিমা মারা যান। স্ত্রী হত্যার ঘটনায় রিটন মিয়া বাদী হয়ে ২০১৭ সালে ৪ঠা জানুয়ারি কেন্দুয়া থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে আসামি করে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রুজু করেন।
সুত্র মানবজমিন