মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এখন ও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে জোড়া খুনের আসামিরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জে প্রকাশ্য দিবালোকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজছাত্র ঈশান ও মনির নামে দুই যুবককে হত্যার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন ও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এদিকে হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে ঘুরাফেরা করছে এলাকায়। বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন নিহতদের পরিবারকে। ফলে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও যেন কান্না থামছে না ঈশানের মা আকলিমার। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কেঁদেই চলেছেন তিনি। আর সন্তান হারা বাবা মিজানুর রহমানের কথাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। কথায় আছে পিতার কাঁদে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী বোঝা পৃথিবীতে আর নেই। ছেলে হারানোর জ্বালা যেন প্রকাশ করছে রক্তবর্ণ চোখ দুটি।
এদিকে বিধবা মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল নিহত মনির। ওই মায়ের বড় দুই ছেলে বিয়ে করে সংসার গড়েছেন আলাদা করে। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন চলছে তাদের। নিহত মনির থাকতেন মায়ের সাথে। হত্যাকাণ্ডের মাত্র ২০ দিন আগে বিয়ে করেছেন মনির। ফুলটি যেন মুকুলেই ঝরে গেল নতুন সংসারের। ঘটনার পর প্রতিদিনই তিনি মনিরের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে লামাবায়েক গ্রামের কলেজছাত্র ঈশান (২২) ও সদ্য বিবাহিত মনির হোসেনকে (২৪) প্রকাশ্যে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
জানা যায়, চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়ার সময় আলী আজম ও দুলাল মিয়ার মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরধরে প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে ঘটনাস্থলে ইশান ও মনির নিহত হয়। একই গ্রামের আলী আজ্জম, মাহফুজ ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা করে তাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতদের মধ্যে ঈশান স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতে আসেন। মনির হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মাত্র ২০ দিন আগে তিনি কাবিন করে বিয়ে করেছিলেন। ঘরে নতুন বউ উঠানোর প্রস্তুতি নিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন তিনি।
এ ঘটনায় গত ১ অক্টোবর আশুগঞ্জ থানায় ২১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা হওয়ার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এই পর্যন্ত একজন আসামী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত ঈশানের বাবা প্রবাসী মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের এক মাস পার হলেও আসমিদের ধরা হচ্ছে না। তাদের হুমকি ও ভয়-ভীতিতে খুব আতঙ্কে রয়েছে আমার পরিবার। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তিনি ।
আকলিমা আক্তার জানান, ‘ছেলেই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। অনেক শ্রম অনেক প্রচেষ্টা দিয়ে তাকে লালন পালন করে অনার্সে ভর্তি করিয়েছি। আমার আরেকটি প্রতিবন্ধী শিশু ছেলে রয়েছে। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তারা মুক্ত আকাশের নীচে ঘুরাফেরা করছেন। আর আমরা কষ্টে দিন পার করছি।’
উল্লেখ্য যে, গত ২০ অক্টোবর কলেজছাত্র রেদুয়ান ঈশান ও মুনির হোসেন হত্যাকান্ডের এক মাসে ও জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলার বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকে রহস্য জনক মনে করছে সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীরা এবং এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশের কার্যত কোন শক্ত ভূমিকা নেই বলে ও তারা মন্তব্য করেন। হত্যাকান্ডের একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত ১ জনকে গ্রেফতার করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনী এমনকি এ ব্যাপারে তারা কোন সাড়াশি অভিযান ও চালাতে পারেনী বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এ নিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় দেড় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মনববন্ধনে ব্লাড ফর আশুগঞ্জ, জাদুর শহর আশুগঞ্জ, আশ্রয় বিদ্যাপীঠ, মানব কল্যাণ আশুগঞ্জ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদসহ উপজেলার ১৭টি সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং ঈশানের পরিবারের সদস্যরাসহ এলাকার বিভিন্ন স্তরের লোকজন উক্ত মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন।
মানববন্ধনে ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে অংশ নেন নিহত ঈশানের বাবা মিজানুর রহমান ও মা আকলিমা বেগম আখি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধীরা সাধারণত পালিয়ে থাকে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।