মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কাউখালীতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকবিরোধী জনসচেতনামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত শ্রীগুরু সংঘ কেন্দ্রীয় আশ্রমে পাঁচ দিনব্যাপী রাস উৎসব শুরু প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান মঠবা‌ড়িয়ায় স্কুলছাত্রীকে ব্লেড দিয়ে জখম শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কাউখালীতে আনন্দ মিছিল ভান্ডারিয়ায় অগ্নিকাণ্ডের বসতঘর পুড়ে ছাই পরীক্ষায় ফেল করায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা পিরোজপুর-১ আসনে পুনরায় শ ম রেজাউল করিমকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় ইন্দুরকানীতে আনন্দ মিছিল গোপালগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন করবেন শেখ হাসিনা সালিশ বৈঠকে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ত্রীকে তালাক দিতে বলায় স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা নৌকার মনোনয়ন পেলেন যারা কাউখালীতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির কমিটির গঠন ফেজবু‌কে স্টাটার্স দি‌য়ে অনার্স পড়ুয়া ছা‌ত্রের আত্মহত্যা ভান্ডারিয়ায় পানিতে ডুবে হাফিজিয়া মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু ভান্ডারিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত দুই জাহাজের সংঘর্ষঃ ডু‌বে যাওয়া থে‌কে রক্ষা পে‌লো সা‌ড়ে ১৩ টন ডাল বোঝাই জাহাজ কাউখালীতে নবান্ন উৎসব উদযাপিত মঠবাড়িয়ায় দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ কাউখালীতে ঘূর্ণিঝড় মিথিলার প্রভাবে আমন খেতের ব্যাপক ক্ষতি শিক্ষক লাঞ্ছনার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কাউখালীর ইউএন‌ও ভান্ডারিয়ায় বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন
পরিবারের সাত বুদ্ধি ও শারিরিক প্রতিবন্ধী নিয়ে কি করবেন সরলা বালা?

পরিবারের সাত বুদ্ধি ও শারিরিক প্রতিবন্ধী নিয়ে কি করবেন সরলা বালা?

যশোরের চৌগাছায় এক পরিবারে সাত বুদ্ধি ও শারিরিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (ঋষি) এক নারী সরলা দেবী। তার অভিযোগ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ভুলেই তার সন্তানদের আজ এই অবস্থা। চিকিৎসকদের ভুলের মাশুল তাকে এখন প্রতিবন্ধী সন্তানের বোঝা বয়ে দিতে হচ্ছে। জানা যায়, চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জনের স্ত্রী সরলা বালা। ঋষিপাড়া হলেও এলাকাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে দু’শ মিটার দূরত্বে পাকা সড়কের পাশেই সামান্য জমির উপর কাঁচা-পাকা ঝুপড়ি টাইপের বাড়ি সরলার।

হত দরিদ্র সরলার জীবন চলে বোকার (পাঠা) মাধ্যমে বকরি (ছাগল) পাল (প্রজনন) দিয়ে। একসময় বেশ কয়েকটি পাঠা থাকলেও এখন মাত্র দু’টি পাঠা আছে তার। স্বামী নিরঞ্জন করিমন (স্থানীয় ইঞ্জিন চালিত বাহন) চালাতেন। স্ট্রোকের পর প্যারালাইজড হয়ে বছর তিনেক হলো কোনভাবে চলতে-ফিরতে পারেন। সরলার চার ছেলের মধ্যে ছোট তিন ছেলে মহন (১৯) এবং জমজ মিলন ও নয়ন (১৫) লাইগেশনের পর জন্ম নেয়া। তারা তিন জনই শারীরিক এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় অম্বালিকা (৩৫) শিশুবেলায় হামজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন দৃষ্টিশক্তিহীন। সেজে মেয়ের দু’ছেলে বিদ্যুৎ (১৪) ও বিধান (১২) বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদেরও নেই থাকার কোন জায়গা। সরলার বাড়ির মধ্যেই থাকে তারা। উপজেলা সমাজসেবা অফিস এসব প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে।

সরেজমিনে সরলার বাড়ি গিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রথমে তিনি কথাই বলতে চাচ্ছিলেন না। ক্ষোভের সাথে বলছিলেন বাপু কত লোক আসে। বলে এ দেব, ও দেব। শুনে চলে যায়। কিছুই তো পাইনে। তোমাদের সাথে কথা বলতে আমার যে সময় নষ্ট হবে, সেসময়ে আমার কাজ করতে পারবো। এই দেখ কাল সন্ধ্যা থেকে আমার একটা ছাগল হারিয়ে গেছে। সেই সকাল থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি পাচ্ছি না। কথার ছলে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। স্বাভাবিক হয়ে আসেন তিনি। ঘরের বরান্দায় বসতে দেন একটা মাদুর পেড়ে। বলেন, শুনবা? আমার এই কাহিনি? তুমরা বাপু শিক্ষিত মানুষ। আমরা তো হত-দরিদ্র। আমার এইটুকুই আছে.. বলে চলেন সরলা। বিয়ের পর আমার পরিবার-পরিকল্পনার বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না। তোমাদের কাকাও (নিরঞ্জন) এসব নিয়ে ভাবতেন না। এভাবেই আমার একে একে সাত সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে একটি সন্তান শিশু বেলায় মারা যায়। এরপর চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের লোকেরা আমার বাড়িতে আসে। সে সময় হাসপাতালের টিএইচও ছিলেন ডা. অরুন কুমার বিশ্বাস। তাদের আশ্বাসে ৯৮ সালের শেষ দিকে কি ৯৯ সালের শুরুতে চৌগাছা হাসপাতালে আমার পেট কেটে লাইগেশন (অপারেশন) করা হয়। কিন্তু তার পরও ৯৯ সালে আমার পেটে সন্তান আসে। আমি হাসপাতালে গেলে তারা বলেন সন্তান আসেনি। তোমার পেটে কিছু হয়েছে। ২০০০ সালের জুন মাসে (জুনের ৫ তারিখ) আমার ছেলে মহনের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়। এরপর আমি আবারো হাসপাতালে গেলে আমাকে আবারো অপারেশন (দিন তারিখ মনে করতে পারছিলেন না) করা হয়।

এরপর আমি আবারো গর্ভবতী হয়ে পড়ি। এবার আমার জমজ সন্তান পেটে আসে। সন্তান পেটে আসলে আমি আবারো হাসপাতালে যাই। তখনও ডাক্তারা বলে তোমার পেটে কোন সন্তান নেই। আমি বলি জমজ সন্তান আছে। এ নিয়ে ডাক্তারদের সাথে আমার কথাকাটাকাটি হয়। তারা জোর দিয়ে বলে তোমার পেটে সন্তান নেই। আর আমি বলি আছে। জমজ সন্তান আছে। এরপর তারা আমাকে যশোরে পাঠায় পরীক্ষা করতে। সেখানে ডাক্তাররা আমার পেট টিপেটিপে ব্যাথা করে দেয়। তখন আমি রাগ করে বলি আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমার পেটে জমজ সন্তান। আর আপনারা শুধু টিপে ব্যাথা করে দিচ্ছেন। পেটের মধ্যে যদি আমার সন্তানরা মারা যায়। আপনারা দায়িত্ব নিবেন? এরপর আমার কি যেন পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তাররা নিজেরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। পরে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০০৪ সালে (১ জানুয়ারী-০৪) আমার জমজ ছেলে মিলন ও নয়নের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়। ওদের জন্মের পর আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা দেয়া হয়। বলা হয় এনিয়ে তুমি কোন ঝামেলা করো না। আমি গরীব মানুষ। আমি ‘কিই বা করবো’ তুমরাই বলো?

‘বড় ছেলে মদন তার স্ত্রী নিয়ে আলাদা। করিমন (ইঞ্জিন চালিত স্থানীয় বাহন) চালিয়ে নিজের সংসার চালায়। বড় মেয়ে অম্বালিকা আমার ঘাড়ে। অন্য মেয়েদের বিয়ে দিছি। তাদের মত তারা কোনরকমে কাজকাম করে চলে। সেজো মেয়ের দু’ছেলে। তারাও বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওদের কোন জমি নেই। এই দেখ আমার ইকেনেই থাকে।’ ‘ছোট ছেলে দু’টো (মিলন ও নয়ন) ওই দেখ বইয়ের প্যাকেট নিয়ে স্কুলে যায়। পড়া তো পারে না। শুধুই যায়।’ বললেন, ‘বড়মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। আর তুমার কাকার একটা করে দিয়েছে কাউন্সিলর।’চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান বলেন ওই পরিবারের বড় মেয়ে এবং তার পিতাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেয়া যায় না। শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা হলেই কেবল সবাইকে ভাতার আওতায় আনা যেত।চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার বলেন, বর্তমানে কোন পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ২০১৬ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই কেবল ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেয়া সম্ভব হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019 pirojpursomoy.com
Design By Rana