সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কাউখালীতে জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালিত শেখ হাসিনার উন্নয়নে বাংলাদেশ রোল মডেল -মহিউদ্দিন মহারাজ সাংবাদিক ছগির হোসেনের মৃত্যুতে দোয়া ও মিলাদ কাউখালীতে নিজ উদ্যোগে রাস্তার সংস্কারের কাজ করছেন মহিউদ্দিন মহারাজ ভান্ডারিয়ায় দুই ব্যাংক গ্রাহকের আড়াই লাখ টাকা চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের চার নারী সদস্য আটক তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না -নজরুল ইসলাম খান দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপি’র ৮০ কিমি রোডমার্চ পটুয়াখালী থেকে শুরু পিরোজপুরে শেষ ভান্ডারিয়ায় ডাকাত দলের সদস্য আটক কাউখালীতে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়া মাদ্রাসা ছাত্রকে বেধড়ক মারধর! হাসপাতালে ভর্তি ও তদন্ত কমিটি গঠন কাউখালীতে উপজেলা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত কাউখালীতে এলসিএস কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ঝালকাঠিতে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালিত ইন্দুরকানী সরকারি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক শারমিন হোসাইন আর নেই পিরোজপুরের নাজিরপুরে এসিল্যান্ডের ঘুষের নির্দেশনার কথোপকথন ভাইরাল- বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ কাউখালীতে দিনব্যাপী সমবায় ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালন কাউখালীতে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উদ্বোধন কাউখালীতে মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক পক্ষের উদ্বোধন
ছড়িয়ে পড়েছে রোটা ভাইরাস

ছড়িয়ে পড়েছে রোটা ভাইরাস

দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রোটা ভাইরাস। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রধানত দায়ী এই ভাইরাস। প্রতিবছরই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সংখ্যায় শিশুর মৃত্যু ঘটে। শীত ও গরমকালে এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হয়।

কয়েক বছর আগে থেকেই সরকারিভাবে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় রোটা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই অসন্তোষ ও বিতর্ক আছে।

দেশের সাতটি বিশেষায়িত হাসপাতালে শিশু রোগীদের ওপর বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে দেখা যায়, ৮২ শতাংশই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত; যাদের মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুর এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার ছিল ৮৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২০ লাখ। আর মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে আটজনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী প্রধান চারটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রোটা ভাইরাস।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, ডায়রিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক রোটা ভাইরাস। এখন যে ডায়রিয়ার প্রকোপ চলছে সেটার বেশির ভাগই এই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনো পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসা নেই। তবে স্যালাইনসহ আরো কিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাপনা আছে। সেগুলো ভালোভাবেই চলছে। তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে আমরা এখনো জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে রোটা ভাইরাসের টিকা চালু করতে পারিনি আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অভাবে।’

ওই রোগতত্ত্ববিদ আরো বলেন, ‘বেসরকারিভাবে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পাওয়া যায়। সরকারিভাবে দেওয়ার জন্য আরো আগেই আমরা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশনের (গ্যাভি) অনুমোদন পেয়েছি। বছরখানেক আগে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে এই টিকা চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো কোনো পক্ষ থেকে এই টিকার কার্যকারিতা ও ভালোমন্দের ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠে। এরপর এসব বিষয় নিষ্পত্তি করার জন্য সাবকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এখনো ওই কমিটির কাজ শেষ হয়নি।

কমিটির চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি এই মৌসুমে যত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের প্রায় ৮২ শতাংশই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত। এ ছাড়া সারা বছর যত ডায়রিয়া রোগী থাকে গড়ে তার ৬০ শতাংশই থাকে রোটা ভাইরাসের শিকার। আমরা যত দ্রুত জাতীয়ভাবে রোটার টিকা চালু করতে পারব ততই শিশু ও বড়—সবারই উপকার হবে, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার কমবে, মৃত্যুও কমবে।’

অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জানান, আগে রোটা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য কেবলই দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে দায়ী করা হতো। তখন ধারণা করা হতো, এটা কেবলই পায়খানার মাধ্যমে ছাড়ায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পায়খানার পাশাপাশি এটি ছড়াচ্ছে হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও, যা খুবই বিপজ্জনক। আর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প চিকিৎসা চালু হয়নি। কেবল কিছু পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীকে কিছুটা সুস্থ রাখা যায়। এ ছাড়া রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রধানত শীত মৌসুমে বেশি হলেও বছরের অন্যান্য সময়েও হয়। ফলে সব সময়ই সতর্কতা প্রয়োজন।

অন্যদিকে ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) সূত্র জানায়, দেশে ডায়রিয়ার জন্য দায়ী ভি-কলেরি, সিগেলা, ইটিইসি ও রোটা ভাইরাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় সংক্রমণ রয়েছে রোটা ভাইরাসের।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রোটা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানুষের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আক্রান্তদের উপসর্গ হিসেবে প্রথমে শুরু হয় বমি। এরপর আস্তে আস্তে পানির মতো পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া না গেলে প্রাণহানির আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সঙ্গে জ্বর ও পেটব্যথাও থাকতে পারে। ৯ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে বমি ও জ্বর। ডায়রিয়া থাকতে পারে ২১ দিন।

এবার কেবল ডায়রিয়াই নয়, সঙ্গে শীতজনিত অন্যান্য রোগের প্রকোপও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগের সঙ্গে আছে সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী রাইনো ভাইরাসের প্রকোপও।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, শীতজনিত অন্যান্য রোগের ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। এই সময় অনেক ধরনের ভাইরাস মানুষকে সহজেই আক্রান্ত করে থাকে। ফলে ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা, গরম কাপড়, গরম খাবার, গরম পানি ব্যবহার করলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সহজ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, সোমবার সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২৯৬টি উপজেলায় ডায়রিয়াসহ শীতজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে আরো পাঁচ হাজার ৮৯৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে এক হাজার ৯৫৮ জন, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও নিউমোনািয় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৯২৯ জন এবং শীতজনিত অন্যান্য রোগে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ১২ জন।

ওই সূত্রের তথ্য অনুসারে গত ১ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে কেবল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৫৭৮ জন। আর চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019 pirojpursomoy.com
Design By Rana