মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
রেলওয়ে স্টেশন পরিষ্কার করতে ৯৫ লাখ টাকার ভিম পাউডার, ছোট্ট একটি টয়লেট মেরামতে ২৮ লাখ টাকা, টয়লেটসহ বারান্দার টিন বদলে ৭৩ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন ছোট ছোট কাজে কয়েকশ কোটি টাকার বিল দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন প্রকল্প বরাদ্দে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে এমন ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে নামে-বেনামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাবদ কয়েকশ কোটি টাকার বিল দেখিয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর দেখানো হয়েছে এসব কাজ কোনো টেন্ডার ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদাররা করেছেন। ফাঁস হওয়া নথিপত্রে বিভিন্ন স্টেশন রঙ করা, লাইন সংস্কার, রেলসেতু রঙ করা, টয়লেট মেরামত, ছাউনি-প্ল্যাটফর্মের টিন বদল, স্টেশন প্রাঙ্গণ সংস্কার, ওভার ব্রিজ সংস্কার, মাটি ভরাট, জেটি সংস্কার, হাঁটার পথ সংস্কার, দরজা মেরামত, শীত আর গরমের পোশাক কেনা, স্যানিটারি উপকরণ ও ভিম পাউডার কেনাসহ ছোট ছোট কাজে এমন বিল দেখানো হয়েছে।
বারান্দার টিন পরিবর্তন ও একটি টয়লেট সংস্কারে ৭২ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চল রেলভবনে এসএসএই দপ্তরে। অথচ দপ্তরটি একটি ছোট্ট টিনশেডের অফিস। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই মোমিন ট্রেডার্স নামে তৃতীয় শ্রেণির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। পশ্চিমাঞ্চল রেলের টেলিযোগাযোগ ও সংকেত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের একটি টয়লেট মেরামতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। এ কাজটিও কোনো নিয়ম না মেনে তোফা কন্সট্রাকশন নামে তৃতীয় শ্রেণির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রেল অফিসার্স মেসের একটি কক্ষের মেরামত ও হাঁটার পথ সংস্কারে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮০ টাকা।
এদিকে ২ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে রাজশাহীর ভদ্রা ব্যারাকের পুকুরপাড় উন্নয়ন ও ওয়াশপিট সম্প্রসারণে। কাজটি আশরাফুল কবির নামে একজন ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে পুকুরপাড় উন্নয়নের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া রেলওয়ে কর্মচারীদের শীত ও গরমের পোশাক কেনা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে উল্লাপাড়া স্টেশনের ইয়ার্ডে বালু ভরাট বাবদ ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকা, রাজশাহী রেলস্টেশনের বুকিং কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও কার পার্কিং এরিয়া মেরামত বাবদ ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৪ টাকা এবং বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন পরিষ্কার করতে ৯৫ লাখ টাকার ভিম পাউডার কেনা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে।
দুর্নীতির এমন মহাযজ্ঞে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী ও তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে মোংলা রেল প্রকল্পের পরিচালক। এরই মধ্যে এসব দুর্নীতির নথিপত্র জব্দ করে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘অল্প কয়েকদিন হলো এই অঞ্চলের দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার দেখা করে গেছেন। তাদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’ রেলওয়ে বিভাগের এমন পুকুর চুরির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মোর্শেদ আলম বলেন, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রেলওয়েতে। জনবল কম থাকায় এই সেক্টরে তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তারপরও তদন্ত পুরোদমে চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।
সুত্র বিডি২৪লাইভ.কম