মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন
বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে নির্যাতন করা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন এর আগে কক্সবাজারেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ড থাকাকালীন ২০১৮ সালের মে মাসে রোজাদার এক বৃদ্ধকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে পাড়িয়েছিলেন তিনি। মাটিতে পড়ে থাকা বৃদ্ধের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গেয়ে উপর বসে কিল ঘুষি মারেন। এক পর্যায়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে কান ধরে টেনে-হিঁছড়ে তুলে কক্সবাজার সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে নিয়ে যান। এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হলে নাজিম উদ্দিনকে কক্সবাজার থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধের নাম মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি। তিনি কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত কবির আহমদের ছেলে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঘটনার সময়টি পবিত্র রমজান মাস ছিল। আমি রোজা রেখেছিলাম। ওইদিন হঠাৎ করেই আমার ভিটেতে কয়েকজন লোক গিয়ে জমি পরিমাপ করা শুরু করেন। এ সময় আমি তাদের-‘আপনারা কারা’ জিজ্ঞেস করতেই এসিল্যান্ড নাজিম আমাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে পাড়াতে থাকেন। আমি মাটিতে শুয়ে থাকলে এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে স্যার ডাকলি না কেন?’ এসময় তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি মাটিতে শোয়া অবস্থায় আমার বুকের ওপর বসে মারধর করতে থাকেন। আমাকে আমার বাড়ি থেকে তুলে কান ও শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে এসিল্যান্ড সদরের অফিসে নিয়ে যায়। নাজিম উদ্দিনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কক্সবাজারের নাগরিক আন্দোলনের নেতা এইচ এম নজরুল ইসলামও। তিনি বলেন, এই নাজিম উদ্দিন দুই বছর আগে কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ড ছিলেন। দায়িত্বকালে বহু বিতর্ক জন্ম দেন। তাকে ‘স্যার’ না ডাকায় এক সংবাদকর্মীকে লাঞ্ছিত করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, এক বৃদ্ধ লোককে কান টেনে শার্টের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যান। নিজ অফিসে দরজা বন্ধ করে খালি স্ট্যাম্পে দস্তখত নেন। মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করেন। আরো অনেক অভিযোগ। বিতর্কিত আচরণে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনকে। নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের সইতে পারতেন না। নজরুল ইসলাম আরও জানান, তিনি কক্সবাজারে যেখানেই যেতেন, সাংবাদিকের ওপর চড়াও হতেন। বলতেন, সাংবাদিক নাকি তার জাতশত্রু। নাজিম উদ্দিন কক্সবাজার থেকে বদলি হওয়ার পরও বহু জনের কাজ থেকে নামজারিসহ জমি সংশ্লিষ্ট কাজের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার থেকে যখন নানা অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল তখন যদি বদলির বদলে শাস্তি নিশ্চিত করা হতো তাহলে পুনরায় তিনি এমন অপকর্ম করার সুযোগ পেতেন না। শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন লোকজন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানের দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। সেসময় নাজিম উদ্দিন তার মাথায় কিল-ঘুষি মেরে কুড়িগ্রাম ডিসি অফিসে নিয়ে মারধর ও উলঙ্গ করে ভিডিও করেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই সাংবাদিক।
সূত্রঃ newsnow24.com