বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
ভান্ডারিয়ার কুখ্যাত ডাকাত কাইউম কবিরাজ ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার অতিরিক্ত পরীক্ষা ফি আদায়ের প্রতিবাদে ভান্ডারিয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ॥ অবস্থান কর্মসূচী (ভিডিও) ভান্ডারিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ ভান্ডরিয়ায় বিকাশ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আট লক্ষ টাকা ছিনতাই  দুই ছিনাতাকারী গ্রেপ্তার ভান্ডারিয়ায় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা ভ্রাম্যমান আদালতে ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা ভান্ডারিয়ায় বিএনপি সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কাউখালীতে অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত নেছারাবাদে বন বিভাগের গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা কাউখালীতে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন কাউখালীতে কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় বিআরডিবি কর্তৃক মাসিক যৌথ সভা ও ই-প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নেছারাবাদে জোড়পূর্বক ১৭ লাখ টাকার পাওনার বিপরীতে ২ কোটি টাকার সম্পদ লিখে নেয়ার অভিযোগ ভান্ডারিয়ায় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান ভান্ডারিয়ায় ঝাড়ফুঁক নিতে এসে বৃদ্ধের মৃত্যু মঠবাড়িয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের লাশ উদ্বার কাউখালীতে পলিথিন ব্যাগ জব্দ করেছে ভ্রাম্যমান আদালত কাউখালীতে নাশকতা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার কাউখালীতে শহীদ জিয়া স্মৃতি হাডুডু টুর্নামেন্ট খেলার উদ্বোধন ভান্ডারিয়ায় ইঁদুর মারা ফাঁদে প্রাণ গেল জেলের কাউখালীতে কৃষি উপকরণ বিতরণ
একজন অতিরিক্ত সচিব যদি এতটা অবহেলার শিকার হয়, অন্যদের কথা ভাবুন

একজন অতিরিক্ত সচিব যদি এতটা অবহেলার শিকার হয়, অন্যদের কথা ভাবুন

বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার মারা গেছেন কিডনির জটিলতায়, শ্বাসকষ্টে। তার দরকার ছিলো আইসিইউ’র চিকিৎসা। তাকে নিয়ে ঢাকার অন্তত ৮টি হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন তার কন্যা সুস্মিতা আইচ।

সুস্মিতা আইচ কেবল চিকিৎসকই নন, সরকারের পক্ষ থেকে যে হটলাইন নম্বর স্বাস্থ্য সেবা দেয় সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ডায়ালিসিসের পর শ্বাসকষ্টের মধ্যে গৌতম আইচকে ল্যাব এইড হাসপাতাল কন্যার হাতে তুলে দেয়াকেই ‘দায়িত্ব’ মনে করেছে। সেখান থেকে ডাক্তার সুস্মিতা আইচ গেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালে, মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্কয়ার হাসপাতালে, আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে, মিরপুর রিজেন্ট হাসপাতাল – কিন্ত কোথাও গৌতম আইচকে ভর্তি করানো যায়নি। যে হাসপাতালে ডাক্তার সুস্মিতা চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালেও তাঁর পিতার জায়গা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মতো বাড়িতে বসেছিলেন। পরিচিত ব্যক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্যে নির্ধারিত হাসপাতাল। কিন্ত সেখানে অনেক অনুরোধের পরেও তার পরীক্ষা হয়নি।

“যে বেডে তাকে রাখা হয়েছিল কোনো সরকারি ডাক্তার সেখানে যায়নি। তারা আমাকে ওষুধ বুঝিয়ে দেয়, আমিই ওষুধ খাওয়াচ্ছি, আমার ভাই অক্সিজেন দিচ্ছে” – বলেছেন সুস্মিতা।

দু’দিন ধরে তার একটা পরীক্ষা করা যায়নি তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা।

শনিবার গৌতম আইচ মারা গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর পরেও তাঁর পরীক্ষা হয়নি। কন্যা, চিকিৎসক অনুরোধ করেছেন এখনও পরীক্ষা করুন। তাও হয়নি। এই হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল।

গৌতম আইচ সরকারের পরিবারের এই অভিজ্ঞতা এখন প্রতিদিনের বিষয়, অনেকের অভিজ্ঞতার। কিন্ত কে কার খবর রাখছে? রাজধানীতে একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি এতটা অবহেলার শিকার হতে হয় – অন্যদের কথা ভাবুন। ঢাকার বাইরের অবস্থা ভাবুন। তারপরেও বলছেন চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েনি! কোভিড-১৯ বাংলাদেশে এসেছে পঞ্চাশ দিনের বেশি। ইতিমধ্যে ধনীদের জন্যে হাসপাতাল খোলার আয়োজন হয়েছে, দোকানপাট খোলার জন্যে প্রাণপাত শুরু হয়েছে, গার্মেন্টস খাতের কারখানা খুলে বিপদের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, ত্রাণের চাল চুরি বন্ধ হয়েছে এমন নয়। তদুপরি অনেক রকম ‘প্রণোদনা’ হচ্ছে। দরিদ্র, নিম্নবিত্তদের হাতে অর্থ তুলে দেবার ‘পরিকল্পনা’ হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থের জন্যে দেনদরবার হচ্ছে। কিন্ত সাধারণ মানুষের জন্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, সহজে পরীক্ষা করা গেলে এই অবস্থা সামান্য হলেও মোকাবেলা করা যেতো।

কিন্তু সেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। স্বল্পমূল্যের পরীক্ষা কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা কমিটি হয়েছে, তার আগে অনেকেই অনেক ধরণের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি-আইন-কানুন-নীতি দেখিয়েছেন। আদালত খোলা থাকলে এরা হাইকোর্ট দেখাতেন না এমন নিশ্চয়তা নেই। কিন্ত সব মিলে হাইকোর্ট দেখানো থেকে কম হয়নি। কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষায় কমিটি হয়েছে, কিন্তু কমিটির কি হয়েছে তার খবর নেই। সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর কী অবস্থা তা নিয়ে এদের কোনো চিন্তা নেই। কেন দরিদ্র মানুষ বিক্ষোভ করছেন সেটি বূঝতে পারছেন এমন মনে হয় না। দরিদ্রের জন্যে দ্বন্দ্বটা জীবন এবং জীবিকার নয় – এখন বাঁচার চেষ্টা মাত্র। দরিদ্র মানুষের জন্যে ‘পছন্দের’ বিষয় হচ্ছে কীভাবে মারা যাবেন – করোনাভাইরাসে, উপসর্গে না ক্ষুধায়। কিন্তু দেশের মানুষ এই সব নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। মাথার ওপরে ঝুঁলিয়ে দেয়া হয়েছে ‘ডেমোক্লেসের তরবারি’ – ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

সুস্মিতা আইচ হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। যারা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা কোন রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন না, কেননা এই জবাবদিহি চাইতে পারে সরকার এবং রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্র এবং সরকার যখন জবাবদিহির তোয়াক্কা করে না তখন সর্বত্রই এই অবস্থার সুচনা হয়। এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়ে তা বুঝতে পারছেন।

লেখক : অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019 pirojpursomoy.com
Design By Rana
error: Content is protected !!