শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করা প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান মিজানকে ওই ঘটনায় জড়িয়ে হত্যা মামলার আসামী করায় দেশ ব্যাপী সাংবাদিকদের মাঝে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার সাংবাদিকরা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। সাংবাদিকদের দাবি অবিলম্বে তাকে হত্যা মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করা হোক।
জানা গেছে, তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফলে স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক জুয়েল’র বিরোধে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২৪ মে রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম তাপস দাস (৩৪) নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হন।
মঙ্গলবার তাপসের ভাই পঙ্কজ দাস ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বাউফল উপজেলার প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিনিধি মিজানুর রহমান মিজানকে ২০ নাম্বার আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মে) দুপুরে পটুয়াখালী প্রেসক্লাব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ।এক যৌথ বিবৃতিতে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী শামসুর রহমান ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী সালাহউদ্দিন বলেন, পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামীলীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের রাজনৈতিক সহিংসতার মামলায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান মিজানকে আসামী করায়, প্রকৃত ও বস্তুনিষ্ষ্ঠ সংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা কোন দল বা গ্রুপের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া স্বাধীনত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নির্ভয়ে লেখনির স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেখানে সত্য কথা লিখতে গিয়ে কোন দল বা গ্রুপের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাংবাদিকদের মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, তা আমাদের কারও কাম্য নয় এবং এটা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয় । তাই আমরা অতিদ্রুত ওই মামলা থেকে সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান মিজানের নাম প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় গোটা সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং ওই দল কিংবা ওই গ্রুপের সংবাদ প্রেরণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে ।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাউফল প্রেসকাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাচ্চুসহ বাউফল উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
ভুক্তোভোগী সাংবাদিক মিজান বলেন, ‘ক্রেস্ট না ক্যাশ চাই, এমন সংবাদ পরিবেশন করায় ইতিপূর্বে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এমপি ফিরোজ সাহেবের নির্দেশে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এরপর ধর্ষণ, অস্ত্র, লুটপাটের মামলাও করা হয়েছে আমার নামে এসব মামলা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটাও আরেকটা হয়রানি মামলা ।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন জানান, ‘বাউফলের বিষযটি দুঃখজনক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রান হানি আমাদের ব্যথিত করেছে । বাউফলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রিয় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
বাউফল পৌর মেয়র মো. জিয়াউল হক জুয়েল তাপস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সাপেক্ষে খুনিদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ।
বাউফল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বাদীর টাইপ করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করেছি । সাংবাদিকদের মাধ্যমেই জানতে পারি একজন সাংবাদিককে এ মামলায় আসামি হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করবে। এ মামলায় নিরাপরাধ কারো হয়রানি হওয়ার সুযোগ নেই ।’