শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আলোচিত একটি ঘটনার নাম রিক্সাচালক মোবারক হত্যাকান্ড। আশ্চর্যের বিষয়, ঘটনার সাথে জড়িত অর্থাৎ মোবারক হত্যা মামলায় মূল হামলাকারীদের নাম আসামীর তালিকায় নেই।
নবীনগর উপজেলার থানাকান্দি গ্রামের রিকশাচালক মোবারক হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের পাঁচজন আজও ধরা পড়েনি। মামলায় মূল আসামিদের তালিকায় তাদের নাম আসেনি । এ নিয়ে থানাকান্দিবাসিদের দাবী, মোবারকে হত্যাকারীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
ওই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মোবারক হত্যা ছিলো একটি বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড। আর এ হত্যাকান্ড তার স্ত্রীর সামনেই ঘটেছিল এবং তার সামনেই মোবারকের উপর হামলা করা হয়েছিল। মোবারকের স্ত্রীও হামলাকারীদের দেখেছিলেন বলেও তিনি জানান।
কিন্তু মামলার ক্ষেত্রে ঘটল এক তুঘুলকিকাণ্ড। ১৫২ জন আসামির মধ্যে নাম নেই সেই পাঁচজন মূল হামলাকারীর।
নিহত মোবারকের স্ত্রী সাফিয়া বেগম বলেন, এ বিষয়ে বিছু বলতে ভয় করে। আমার ভাসুরের সঙ্গে কথা বলেন।
মামলার বাদী ও নিহতের চাচাতো ভাই মো. চাঁন মিয়া বলেন, হামলার পর আহত অবস্থায় মোবারক যাদের নাম বলেছিলেন তারা হলেন- থানাকান্দি গ্রামের খোকন মিয়া, হাজির হাটি গ্রামের মাইনুদ্দিনের ছেলে রুমান, জিল্লুরের ছেলে শাহিন, মালির ছেলে জাবেদ, উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের জীবনের ছেলে জুয়েল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল থানাকান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও সরদার আবু কাউসার মোল্লার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়। এ সময় কাউসার মোল্লার লোকজন রিক্সাচালক মোবারকের পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং তা নিয়ে আনন্দ উল্লাস ও করে। পরে কাটা পা নিয়ে স্লোগান দিয়ে আনন্দ মিছিল করে হামলাকারীরা।
১৫ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোবারক। মৃত্যুর আগে তিনি বলে যান হামলাকারীদের নাম। তারা হলেন- থানাকান্দি গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া, হাজির হাটি গ্রামের মাইনুদ্দিনের ছেলে রুমান, জিল্লুরের ছেলে শাহিন, মালির ছেলে জাবেদ, উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের জীবনের ছেলে জুয়েল। আরো কয়েকজন ছিলো যাদের চিনতে পারেননি মোবারক। মোবাইলে ধারণ করা মোবারকের এ বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ও ছড়িয়ে পড়ে।
১৭ এপ্রিল ১৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোবারকের চাচাতো ভাই চাঁন মিয়া। তাতে প্রধান আসামি করা হয় পাশের ইউপি’র বীরগাঁওয়ের চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে। এর আগে, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা করে নবীনগর থানায়। সে মামলায় আসামি করা হয়নি কবির চেয়ারম্যানকে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত মোবারকের স্ত্রী,এমনকি মামলার বাদী কেউই কবির আহমেদকে ঘটনাস্থলে দেখেননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এরপরও কবির আহমেদ এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি কি করে হলেন? এটা নিয়ে এখন গ্রামবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত এসপি মকবুল হোসেন বলেন, এরই মধ্যে আমরা মামলার অনেক আসামিকেই গ্রেফতার করেছি। তাদের মধ্যে নিহত মোবারকের বলে যাওয়া আসামিদের মধ্যে দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের কে ধরতে পুলিশী অভিযান চলছে এবং এ অভিযান প্রকৃত আসামিদেরকে খুঁজে বের করা না পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে থানাকান্দি গ্রামে মোবারক হোসেন নামে এক ব্যক্তির দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এ মামলার প্রধান আসামি হলেন সাবেক কৃষক দল নেতা ও উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান কবির আহমেদ।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে রোববার সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার সিন্দুরখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) র্যাব-৯ এর শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের স্কোয়ার্ট কমান্ডার সোমেন মুজুমদার জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান এবং হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. কবির আহমেদ শ্রীমঙ্গলে আত্নগোপন করে আছেন। পরে অভিযান চালিয়ে সিন্দুরখান এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়। সেখানে তিনি একটি স্টেশনারি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তা সোমেন মুজুমদার আরো জানান, তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা রয়েছে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর এককালীন ২৫০০ টাকা প্রদানের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগের ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২৮ মে তাকে বহিষ্কার ও করা হয়।