নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের নেছারাবাদে স্বেচ্ছাচারিতা ও সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গুয়ারেখা ভরতকাঠি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারি শিক্ষক সহ অভিভাবকরা বলেছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কারো কোনো মতামত না নিয়ে সেচ্ছাচারিতা করছেন পবিত্র কুমার মন্ডল। বিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম, যখন খুশি তখন বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থান, ল্যাপটপ সরঞ্জামাদি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার সহ বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমারের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সংশ্লিস্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারনে হয়নি কোন সুফল হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মো. হাসান শেখ নামে এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বিদ্যালয়ের এখন কোন গার্ডিয়ান নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার যখন খুশি তখন বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি এখানে দীর্ঘ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করছেন। এই পদে কোন নিয়োগ হচ্ছেনা। বিদ্যালয়ে নেই কোন হিসাবের খাতা। আয় ব্যায়ের হিসাব থাকে তার কাছে। কাউকে তিনি কোন কালেও বিদ্যালয়ে আসা কোন প্রকল্পের হিসাব দেননি। সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে তিনি একবার বিদ্যালয়ের অনুদানের টাকা উঠিয়ে নিয়েছিলেন। এমনকি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্প আসত। যা তিনি একাই বাস্তবায়ন করেছেন।
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটির সদস্য মো. মিজান শেখ অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম এবং একরোখা সিদ্ধান্তে শিক্ষার পরিবেশ নাজুক অবস্থায়। এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী সংকটে। তিনি সপ্তাহে একদিনের বেশি বিদ্যালয়ে আসেননা। বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় কয়েক দিনের আগাম স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। এভাবে অনিয়মিতের ব্যাপারে জানতে চাইলে অফিসের নানা কাজের অযুহাতের কথা বলেন তিনি। মোট কথা তিনি কারো কাছে কোন হিসাব দেননা।
মাসের পর মাস এভাবে বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার মন্ডলের অনুপস্থিতির কারনে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি একজন অপরিচিত লোক হয়ে গেছেন। এমনকি ওই শিক্ষকের নামও জানেনা বিদ্যালয়ের সপ্তম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর মরিয়াম এবং রশ্মি নামে দুই শিক্ষার্থীর কাছে তাদের প্রধান শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে তারা শিক্ষকের নাম বলতে পারেনি। তারা বলেন, এরকম নামে কেহ আমাদের ক্লাস নেয়না। আমরা চিনবো কি করে।
বিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের সহকারি শিক্ষক পলাশ কুমার মিত্র বলেন, স্কুলের হয়তো অফিসিয়ালী অনেক কাজবাজ থাকে। যেকারনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেশি সময় বাহিরে থাকতে হয়। এভাবে মাসের পর মাস বিদ্যালয়ের এত অফিসিয়াল কি কাজের জন্য তিনি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারবোনা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার মন্ডলকে বিদ্যালয়ে না পেয়ে ফোন দিলে তিনি বলেন আমি অফিসের কাজে বাহিরে আছি। এখন কথা বলা যাবেনা।
নেছারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মহাসিন আলম জানান, তার বিরুদ্ধে চেকে জাল স্বাক্ষর, বিদ্যালয়ে অনিয়মিত সহ অনেক অভিযোগ ছিল। যা তদন্ত হয়েছে। এখন ইউএনও মহোদয় ও জেলা শিক্ষা অফিসার ব্যবস্থা নিবেন।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, “আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”