মঙ্গলবার, ০৩ Jun ২০২৫, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের উত্তর পৈকখালী গ্রামে একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া তিন মেয়েই প্রতিবন্ধী। দারিদ্র্যতায় নিমজ্জিত সেলিম হাওলাদার ও রাজিয়া বেগম দম্পত্তির আশার বাতিঘর ছিলেন বড় মেয়ে রাবেয়া সাবরিন লিখন (২৮)। পরিবারে লিখন ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। শারীরিক সামর্থ্য (বাক প্রতিবন্ধী) নিয়েও সে টঙ্গীর শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট (মৈত্রী শিল্প) কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছিল। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে, ছোট দুই প্রতিবন্ধী বোনের ভবিষ্যৎ গড়তে সে ছিল আলোর দিশারি। কিন্তু সেই আলোই নিভে গেল হঠাৎ।
গত ১৯ মে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী গাজীবাড়ি (পুকুরপাড়) এলাকার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার হয় লিখনের হাত-পা-মুখ বাঁধা লাশ। তার শরীরে আঘাতের চিহ্নই ইঙ্গিত দেয় ভয়াবহ নির্যাতনের। খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় তার নিজ এলাকা ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৈকখালী গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা। প্রতিবন্ধী দুই বোনের চোখে ভয়ের ছায়া। পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে তারা এখন পুরোপুরি দিশেহারা।
পরিবার সূত্রে জানাযায়, প্রায় এক বছর আগে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী গাজীবাড়ি (পুকুরপাড়) এলাকার গোলাম মোস্তফার বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে টঙ্গীর শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট (মৈত্রী শিল্প) কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ওই কক্ষে মা রাজিয়া বেগমকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। রোববার রাতে লিখন একাই বাসায় ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে পাশের ভাড়াটিয়ারা লিখনের কক্ষের দরজা বাহির থেকে আটকানো দেখতে পান। পরে দরজা খুলে ওড়না এবং গামছা দিয়ে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় বিছানার ওপর লিখনের লাশ দেখতে পান।
নিহত লিখনের মা রাজিয়া বেগম জানান, আমার বড় মেয়েই একমাত্র ভরসা ছিল সংসারের। ওর বাবা অসুস্থ। ও চাকরি করে কিছু টাকা রোজগার করতো। সেই টাকাতেই সংসার ও দুই প্রতিবন্ধী দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলাতো। এখন আমায় চালানোর মতো কেউ নাই। আমি এখন সর্বহারা।
স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর।