শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মসলা ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ এখন রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েছেন। ভোক্তাদের প্রতিবাদ ও অভিযোগ জানানোর যেন কোনো জায়গা নেই। বাজার নজরদারিতে সরকারি সংস্থাগুলোর কোনো তৎপরতাও নেই। সুযোগ বুঝে খুচরা দোকানি, পাইকারি ব্যবসায়ী, মজুতদাররা ইচ্ছেমত পণ্যের দাম নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এসব অভিযোগ ভুক্তভোগী ক্রেতাদের। গত দু সপ্তাহের ব্যবধানে যশোরের বাজারে প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ৪ টাকা। মসুর ডালে বেড়েছে ১০ টাকা। এক মাসে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজে বেড়েছে ৫০ টাকা। এক মাসে এলাচের কেজিতে বেড়েছে আড়াই হাজার টাকা।
রান্নার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। সরেজমিনে যশোরের বড়বাজারের পুরোটা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটা দোকানে থরে থরে চালের বস্তা সাজানো। কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। এরপরও চালের দাম বেড়েই চলেছে। কৃষকের ধান হাটে বিক্রি শেষ হওয়ার পর এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ফড়িয়া ও মজুতদারদের ধান। এসব ব্যবসায়ী ধানের ভরা মৌসুমে হাট-বাজার থেকে কৃষককে মণপ্রতি ৩০০/৪০০ টাকা তার উৎপাদন খরচের থেকে কম দামে কিনে মজুত করে রেখেছেন। বর্তমানে কৃষকের ধান মজুতদার ও মিল মালিকদের হাতে। ফড়িয়া ও মজুতদারদের ধান হাট থেকে কিনতে গেলে স্বাভাবিকভাবে বেশি দাম দিতে হবে। কারণ তাদের সিন্ডিকেট আছে। তারা ভাব বুঝে একজোট হয়ে যায়। এই অজুহাতে বাজারে দিনদিন চালের দাম বাড়ছে। আর চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। যশোরের বড়বাজারে গতকাল শুক্রবার মোটা গুটিস্বর্ণা চাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮/৩০ টাকা। ১৫/২০ দিন আগেও গুটিস্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছিল ২৫/২৬ টাকায়। বিআর-১০ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫/৩৬ টাকা, এর আগে বিক্রি হয়েছে ৩০/৩২ টাকা।
বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪২ টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬/৩৮ টাকা। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৪২/৪৪ টাকা। বাংলামতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা, ১৫/২০ দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৮/৫০ টাকা। আমন মৌসুমে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল বিশ^াস জানান, হাট-বাজারে ধান খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বেশি। মোটা ধানের ফলন এবার কম হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বেশি। এদিকে চালের পাশাপাশি কোনো কারণ ছাড়াই ডালের দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ সাধারণত তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার আমদানি করা মোটা ডাল খেয়ে থাকেন। গতকাল বাজারে দেখা যায় আমদানি করা এই মোটা দানার ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। অথচ দু সপ্তাহ আগেও ৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৫ টাকা। এ মাসের প্রথম দিকে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৮৭ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা।গত সপ্তাহেও দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বড় বাজারে ৯০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছিল।
কেজিতে আবারও ৫০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫/৮০ টাকা আর চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫/৭০ টাকা। এইচ এম এম রোডের কাঁচামালের আড়ত ‘নিতাই গৌর ভান্ডার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী নিতাই চন্দ্র জানান, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি ও দাম বেশি থাকায় চাষিরা পুষ্ট হওয়ার আগেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেছেন। এখন কমে এসেছে, এ জন্য আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বাজারে যে পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সেটা হলো এলাচ। ভালোমানের এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। মাসখানেক আগেও ৪ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল। অর্থাৎ খুচরা দোকানিরা প্রতি ১০ গ্রাম এলাচ বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, এর আগে বিক্রি করেছিলেন ২৫ টাকা। দাম বাড়ার বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেন না। তবে বাজারে গুয়াতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচের যথেষ্ট চাহিদা আছে বলে বিক্রেতারা জানান।রান্নার কাজে নিত্যব্যবহার্য এলপি গ্যাসের দামও হঠাৎ করে চলতি মাসের প্রথম থেকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সিলিন্ডার প্রতি ১০০ টাকা বেশি দামে দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। ১২ কেজি ওজনের একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়। এ মাসের প্রথমে যার দাম ছিল ৯৫০ টাকা। এখানেও গ্যাস কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিচ্ছেন। একজন ক্রেতা স্কুল শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যখন-তখন ইচ্ছেমত ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমাদের সংসারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়তি দামে পণ্যসামগ্রী কিনতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা প্রতিবাদ করলেও এর কোনো প্রতিকার নেই। বাজারে কোনো জিনিসের ঘাটতি দেখা না গেলেও যথারীতি পণ্যের বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। বাজার তদারকি সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করলে এভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য জিনিসের দাম বাড়াতে পারতো না।
সুত্র দৈনিক আমাদের কন্ঠ