শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ প্রচারে দিন দিনই আগ্রহ হারাতে বসেছে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। কারণ বিভিন্ন ভয়-ভীতি আর হুমকিতে সাহস হারাচ্ছে তারা। এ নিয়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছে একটি প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকি-ধামকির কারণে সংবাদ প্রকাশের সাহস হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভীতির শিকার হচ্ছে সাংবাদিকরা। নাজমুল হুদা নামের বাংলাদেশী এক টিভি সাংবাদিক গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভের সংবাদ কভার করতে গিয়ে পুলিশের তোপের মুখে পড়েন।
সিপিজের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম শিল্প বিকশিত হতে থাকলেও নানা ভীতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে এর কর্মীদের। পুলিশী নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে গুম করা ও ৫৭ ধারার অধীনে মানহানি মামলা দেয়া হচ্ছে তাদের। অনেক সাংবাদিক জানিয়েছেন, পুলিশ, সেনা গোয়েন্দা বা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ফোন করে ‘পরামর্শ’ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার আর সাহস নেই।’ নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও নিজের সংবাদপত্র নিয়ে শঙ্কিত এই সম্পাদক।
সিপিজের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ভয়ের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদই বাদ পড়ে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে নিয়ে কিংবা চরমপন্থী কোনো গোষ্ঠীকে নিয়ে।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি এখন অতি সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্যে আছি।’ তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৮৪টি মামলা রয়েছে। এতে তার ক্ষতির পরিমাণ ৮০ লাখ ডলার। দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা হওয়ায় তাকে সারা দেশ সফর করতে হয়।
একই ধরনের কথা জানিয়েছেন অনেক সাংবাদিক, যারা ভয়ের কারণে নাম প্রকাশ করতে চাননি। এদের একজন জানান, বিতর্কিত মেয়র নির্বাচনের সময় কীভাবে সংবাদ প্রচার না করতে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
নাজমুল হুদা জানান, তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং প্রহারও করেছে। ৫৭ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কিন্ত সেটা তার শঙ্কার কারণ নয়। তার ভাষায়, ‘যেকোনো সময় আমাকে তুলে নেয়া হতে পারে এবং হত্যা করতে পারে। আমি সব সময় ভয়ে থাকি।’
তবে তাকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ আশুলিয়া থানার ওসি আবদুল আউয়াল। সাংবাদিকদের ভয়ভীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বিষয়টি উড়িয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ৫৭ ধারার বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিক নয়, অনলাইন অপরাধীদের লক্ষ্য করেই আইনটি করা হয়েছে।
সিপিজের প্রতিবেদন মতে, ৫৭ ধারার পরিবর্তে নতুন করে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি বিল’ আনা হচ্ছে। এই আইনটিও বিদ্যমান আইনের মতো সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক। বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও রাজনৈতিকভাবে একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ গণমাধ্যমই এখন ‘দলের সমর্থক ও দলের বিরোধী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এর বাইরে ব্লগারদের জন্যও রয়েছে হুমকি। বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনগুলোর ভয়ে থাকে তারা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে মতিউর রহমান বলেন, ’২৪ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমরা যা অর্জন করেছি, বাংলাদেশের ৪৬ বছরে তা হারিয়ে ফেলেছি।
সুত্র দুর্জয় বাংলা