শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন
দেশে তিনজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বরিশালেও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রতিরোধে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে ৫০০ শয্যা।
এদিকে আতঙ্কিত নয়, সতর্ক হয়ে ও স্বাস্থ্য বিভাগের ঘোষিত নিয়মাবলী মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে জনসচেতনতায় মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ছয় জেলায় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা মূলত পারসোনাল প্রোটেকশন ও হেলথ এডুকেশন নিয়ে কাজ করেছি। এরমধ্য দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া নিশ্চিত করা হবে।’
তাপে করোনা ভাইরাসের স্থায়ীত্ব কমে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশাকরি আবহাওয়া এরকম থাকলে এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশসহ আমাদের এ অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকবে না। বর্তমান সময়ে আবহওয়া পরিবর্তনের কারণে জ্বর হতে পারে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে কারো জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করবেন। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে এসে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এখন পর্যন্ত বরিশালের বরগুনায় একজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রমাণিত হয় তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন।’
বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যেহেতু এখন পর্যন্ত সচেতনতাই একমাত্র প্রতিকার সেকারণে আমরা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবায় সম্পৃক্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করেছি এবং নির্দেশনা দিয়েছি, যেন তাদের কাছে প্রতিদিন যারা আসে তাদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিতে পারেন।
এদিকে পরিচালকের কার্যালয় ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাৎক্ষণিক কোনো সংক্রমণ প্রতিরোধে বরিশাল বিভাগজুড়ে একটি বেসরকারিসহ ৪২টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আইসোলেশন ওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রায় পাঁচশ’ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সব স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক সরঞ্জামাদি কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভাগের সব বেসরকারি হাসপাতালকে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
প্রস্তুত রাখা শয্যার মধ্যে বরিশাল নগরের বেসরকারি সাউথ অ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ২৫০ শয্যা ও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ শয্যার মধ্যে ১২৫টি এরইমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে সদর হাসপাতালগুলোতে পাঁচটি ও বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গড় হিসেবে দু-তিনটি করে মোট প্রায় একশ’ শয্যার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি তবে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে জানিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীদের জন্য আগে থেকেই হাসপাতালের পুরনো ভবনে পাঁচ শয্যার একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা ছিল। তবে আজ দুপুরে হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়। করোনা ইউনিট আইসোলেটেড করার নির্দেশনা আসায় নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ভবনে আড়াইশ’ বেড স্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখন ১২৫টি বেড স্থাপন করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনে ১৫০টি কিংবা আরও বেশি সংখ্যায় উন্নীত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ইউনিটের জন্য স্থান এবং সামগ্রী থাকলেও চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তীব্র সংকট রয়েছে। এ হাসপাতালে ২২৪ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৯৭ জন। অন্যদিকে, ৪২৬ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিপরীতে রয়েছেন ৩০২ জন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’