বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন
ঢাকায় বস্তিবাসীর মধ্যে ৭৪ শতাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর বস্তির বাইরে রাজধানীবাসীর মধ্যে এই অ্যান্টিবডির হার ৪৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে তারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বর্তমান সময়ে এসে উভয় ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির এই হার আরো বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা দেশে করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি তৈরির পথে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে। গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে কভিড-১৯-এর প্রিভিলেন্স, সেরোসার্ভিলেন্স ও জেনোমিক ইপিডেমিউলজিক্যাল সার্ভের ফল অবহিতকরণ সভায় এই তথ্য তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরি। অনুষ্ঠানে অন্য বিজ্ঞানীরা অবশ্য হার্ড ইমিউনিটির বিষয়টি অনিশ্চিত বলে মত দিয়েছেন। গবেষণার তথ্যে জানানো হয়, ঢাকায় বস্তির বাইরের ৩৩৩ জন উপসর্গধারী ও ৩৫৯ জন উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত এবং বস্তি এলাকার ৩৬ জন উপসর্গধারী ও ৮৯ জন উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিবডি টেস্ট করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ফলে এই পরিসংখ্যান পুরো ঢাকাবাসীকে প্রতিনিধিত্ব করে না বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও বর্তমান পরিচালক ড. তাহমিনা শিরিন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তাঁর এক উপস্থাপনায় জানান, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের ৮২ শতাংশই উপসর্গহীন। এর বাইরে ১২ শতাংশ মৃদু উপসর্গ ও ৬ শতাংশের পূর্ণ উপসর্গ ছিল। তবে করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা ও নিত্য পরিবর্তনশীল। তাই নিরাপদ কোনো ভ্যাকসিনের নাগাল না পাওয়া পর্যন্ত সবাইকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত। অনুষ্ঠানে আরেকটি উপস্থাপনায় আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন করোনাভাইরাসের পরিবর্তনশীল রূপ ও এর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। বস্তিবাসীর মধ্যে কেন অ্যান্টিবডি বেশি তা জানতে চাইলে ড. ফেরদৌসী কাদরি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা এখনো আমরা বের করতে পারিনি। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারা যেহেতু বেশি এক্সপোজার হয়েছে তাই সংক্রমিত হতে হতেই তাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আবার করোনার আগের কিছু বৈশিষ্ট্যও এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে তাদের কায়িক পরিশ্রমও একটা ফ্যাক্টর হতে পারে।’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘নতুন এই গবেষণার তথ্য-উপাত্ত করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মকৌশল নির্ধারণে খুবই সহায়ক হবে। আমরা এই তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগাব।’ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন করোনা মোকাবেলায় সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, ইউএসএআইডির ডেরিক ব্রাউন, বিএমজিএফের সুপ্রিয়া কুমারসহ অন্যরা। প্যানেল আলোচনার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে অংশ নেন আইইডিসিআরের বিজ্ঞানী ড. এ এস এম আলমগীর ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. সামস এল আরেফিন। অনুষ্ঠানে গবেষকরা জানান, জুলাইয়ে গবেষণা শেষ হলেও তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণসহ ফল পর্যালোচনায় দুই মাসের বেশি সময় লেগে যাওয়ায় জরিপের ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। করোনায় আক্রান্তরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করেছে, এর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এখনো বিষয়গুলোর চূড়ান্ত কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মিলছে না। তবে আমাদের এখানে ব্যাপকভাবে আইভারমেকটিন ব্যবহারের পর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকাটা এক ধরনের স্বস্তিদায়ক বলে মনে হচ্ছে। আর আমাদের দেশেরই একজন চিকিৎসক প্রথম দায়িত্ব নিয়ে এটা করোনায় আক্রান্তদের সেবায় কাজে লাগিয়েছেন।’ ঢাকায় বস্তির বাইরে জুলাই পর্যন্ত ৪৫ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি থাকায় গত দুই মাসে তা আরো বেড়ে ৫০ শতাংশের ওপরে যেতে পারে বলে অনুষ্ঠানে কেউ কেউ ধারণা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, সেই হিসাব অনুসারে ঢাকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অ্যান্টিবডি অর্জন করেছে। অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের পরিচালক জানান, দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্তদের শনাক্ত শুরুর বিষয়টি প্রকাশ পেলেও মূলত মধ্য ফেব্রুয়ারিতেই দেশে সংক্রমণ ঘটেছে। তবে ওই তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। আর আবার সংক্রমণের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনুষ্ঠানে কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলেন, এরই মধ্যে সৃষ্ট অ্যান্টিবডির জনগোষ্ঠী ও যারা ভ্যাকসিন নেবে তাদের মিলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে অ্যান্টিবডি দীর্ঘস্থায়ী নয়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সবারই ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার হবে। অবশ্য করোনার ভ্যাকসিন সবার জন্য কবে সহজলভ্য হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি।