পিরোজপুরের নেছারাবাদে সীমা ঢালী (০৯) নামের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নিহত সীমা রানী উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের রুদ্রপুর গ্রামের মৃত সজল ঢালীর মেয়ে। তিনি পিরোজপুরের একটি বাসায় গৃহ পরিচালিকা হিসেবে থাকতেন।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পিরোজপুরের একটি ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতের মা রেখা রানী ঢালী জানান, আমার স্বামী ৮ বছর আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ঘরে ছোট ছোট তিনটি সন্তান কিন্তু উপার্জনক্ষম কোন পুরুষ না থাকায় আমি ঢাকায় একটি বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। বাচ্চাদের খাওয়া ও লেখাপড়া না করাতে পেরে ছোট মেয়েকে আমার প্রতিবেশী মেরি রানী শিকদারের প্রস্তাবে পিরোজপুরে তার বাড়িতে কাজে পাঠাই। তারা বলেছিলেন তার ঘরের কাজও করবেন এবং লেখাপড়াও করাবেন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে আমাদের জানায় আমার মেয়ে নাকি গলায় দড়ি দিয়েছেন। তাকে নিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছেন। খবর শুনে আমার আত্মীয়-স্বজন পিরোজপুরে গেলে জানতে পারেন তার আগের দিন বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে তিনি মারা গেছেন। আমাদেরকে জানিয়েছেন একদিন পরে। আমার মেয়ে ছোট মানুষ কিভাবে তিনি গলায় দড়ি দিবেন? ওকে মেরে ফেলা হয়েছে! আমি এই হত্যার বিচার চাই।
অভিযুক্ত মেরী শিকদারের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার স্বামী সন্তোষ হালদার রিসিভ করে বলেন, মেয়েটি খুব জেদী প্রকৃতির ছিলেন। সীমা রানী ঢালির মায়ের সাথে দীর্ঘদিন কথা হয়নি সেই অভিমানে ও গলায় দড়ি দিয়েছে। আমরা ওকে নিজের মেয়ের মত দেখতাম। ওকে একটি নৈশ স্কুলে ভর্তিও করেছি।
এ বিষয়ে গ্রাম চৌকিদার দীপঙ্কর মিস্ত্রি বলেন, মেয়েটির বাবা মারা যাওয়ায় ওর মা তাকে প্রতিবেশী মেরি শিকদার নামের এক লোকের বাড়িতে কাজে পাঠিয়েছিলেন। ওর মাও ঢাকা একটি বাসায় কাজ করে। বাড়িতে এক ভাই ও এক বোন থাকে। আমি সরজমিনে গিয়েছিলাম। এই মৃত্যু রহস্যজনক, কারণ একটি টেবিলের উপর চেয়ার দিলেও ফ্যান হতে পারে না। তাহলে কিভাবে ওই মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়েছে।
ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার গৌরাঙ্গ বলেন, শুনেছি গলায় দড়ি দিয়েছে। তবে প্রত্যক্ষভাবে আমরা পিরোজপুরে কেউ যায়নি। তারা নিজেরা লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরবর্তিতে পোস্টমাডাম করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তবে গলায় দড়ি দেওয়ার মতো কোন আলামত তার শরীরে ছিল না।
গুয়ারেখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ গাজী মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা বোঝা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তে সঠিক বিষয়টি বোঝা যাবে। যদি অন্যায় ভাবে তাকে হত্যা করা হয় অবশ্যই তার শাস্তি হবে।
নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বনি আমিন বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী পোস্টমেডাম রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।