নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের নেছারাবাদে দশ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে চা বিক্রেতা চাঁন মিয়ার ত্রিশ লাখ টাকার জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান মিলনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মিজানুর রহমান উপজেলার ৭০নং পাটিকেলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আলকিরহাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ৭০নং পাটিকেলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান সরকারি চাকুরী আইন অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন নিষেধ থাকলেও আইনকে অমান্য করে ‘আলকিরহাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি: নামে একটি সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার নিবন্ধন নম্বর- নিবন্ধন নং-৫৯ পিডি। এই সমিতির টাকায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি সরকারি খাস জমিতে তৈরি করেছেন দ্বিতল ভবন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী একাধিক গ্রাহকরা বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আলকিরহাট গ্রামের চায়ের দোকানী মো. চাঁন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি সমিতি থেকে প্রথমে দেড় লাখ টাকা লোন আনি। কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করলেও চড়া সুদের কারণে দেনার বোঝা বাড়তেই থাকে। একপর্যায়ে সুদে আসলে লোন দেখায় ১০ লাখ টাকা। সুদে-আসলে সেই দেনা পৌঁছে যায় ২০ লাখে। দেনা শোধ করতে না পেরে অবশেষে চাপের মুখে নিজের সাত শতক জমি ও দোকান মিজানের নামে লিখে দিতে বাধ্য হই। চাঁন মিয়া অভিযোগ করে আরো বলেন— “দশ লাখ টাকার বিপরীতে আমার দোকানসহ ত্রিশ লাখ টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে মিজান স্যার। এখন আমি পথে পথে ঘুরি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের আমি বিচার চাই।
স্থানীয় শাহিন ফকির বলেন, শিক্ষক মিজান গত পাঁচ বছর ধরে সমবায় সমিতি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন, সাপ্তাহিক, মাসিক এমনকি এককালীন আমানতও নিচ্ছেন তিনি। এ সমিতিতে দিনমজুর থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীরাও দ্বিগুণ মুনাফার আশায় টাকা রেখেছেন। সমবায় সমিতি আইনে এই ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। সবাইকে লোভনীয় অফার দিয়ে এখন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে ঘুরাচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী তাসলিমা বেগম জানান, সমিতির টাকায় মিজানুর রহমান নিজ নামে প্রায় ৫০ বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া টাকার গরমে সরকারি খাস জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার ও অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের সুবিধা দিয়ে খাস জমির ওই ভবনটি দখল করে রেখেছে। সরকারি খাস জমিতে কিভাবে বহু দল ভবন করে সেটা বুঝতে পারছি না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, চাঁন মিয়া আমার কাছ থেকে বিশ লাখ টাকার লোন নিয়েছিল। টাকা শোধ করতে না পারায় সে নিজেই আমি, আমার স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে জমি লিখে দিয়েছে। আর সরকারি জায়গায় বহুতল বিল্ডিংয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারিনি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, যারা সমবায় সমিতির আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক সমবায়ের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার সমিতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।