হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক স’ন্ত্রাসী। মুজিববর্ষে তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যায় না।’  মুসলমানদের রক্তে হাত রঞ্জিত ব্যক্তিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানালে এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবে মুসলিম জনতা। ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে মোদিকে দেখতে চায় না। আশা করি এ ব্যাপারে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’

বুধবার (৪ মার্চ) বিকেলে কিশোরগঞ্জ জামিআ নূরানিয়া তারাপাশা কওমী মাদ্রাসার খতমে বুখারী শরীফ উপলক্ষে ইসলামী মহা সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তারা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন সিএএ-এর প্রতিবাদ করায় দেশটির রাজধানী দিল্লিতে মুসলমানদেরকে শহীদ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার ঘর মসজিদকে ভেঙে তাতে গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছে। এসব ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আমরা লক্ষ্য করছি, গুজরাটের কসাইখ্যাত মোদি সরকার আবারো মুসলিম হত্যার হোলি খেলায় মেতে উঠেছে।’

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে উগ্রবাদী ও কট্টর ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করে জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, ‘ভারতের মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে স’ন্ত্রাস চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। গোণহত্যার মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের ওপর যেসব নির্যাতন চালানো হচ্ছে সেখানে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কাশ্মীরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ব’র্বরতা চালাচ্ছে এই জালেম মোদি সরকার। এবার তারা মুসলমানদেরকে দেশছাড়া করার হীন উদ্দেশ্যে মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব বিল পাশ করেছে।’

নরেন্দ্র মোদিকে আর্ন্তজাতিক স’ন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দিল্লিতে মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন সিএএ-এর প্রতিবাদ করায় হিন্দুত্ববাদী স’ন্ত্রাসীরা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, নৃ’শংস হ’ত্যা, মসজিদে ভাঙচুর ও পবিত্র কোরআন শরীফে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অনতিবিলম্বে এসব বন্ধ না হলে ঐক্যবদ্ধভাবে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে ঢাকা মোহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সাহেবজাদা আল্লামা মামুনুল হক হুঁশীয়ারি উচ্চারনে বলেন, ১৬ কোটি মুসলমানের দেশে এবং শাহজালালের পবিত্র মাটিতে যদি কেও কসাই মোদিকে আনবার চেষ্টা করে তাহলে এর পরিনাম ভালো হবে না।

তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষে যে কাউকে দাওয়াত করেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মুসলমানদের হ’ত্যা, মসজিদে আগুন, ঘরবাড়ি জালিয়ে দেওয়া হবে আর মোদি মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অতিথি হবে তা বাংলার মানুষ মেনে নিবে না। যার হাত গুজরাটের পাঁচ হাজার মুলমানের রক্তে রঞ্জিত, যার হাত আমার দিল্লীর মা-বোনের ইজ্জত লন্টিত, যার হাত দিল্লীর মসজিদের মাইক ভেঙ্গে হনুমানের ছবি ওয়ালা পতাকার কলষ্কের দাগ লেগে আছে, যে ভারত বর্ষের কলষ্ক লেগে আছে তাকে আমরা দেখতে চাই না।

তিনি বলেন, একের পর এক মোদি সরকার ভারত থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার পায়তারা করে যাচ্ছে। ভারতে মুসলমানরা তাদের অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করলেও মোদি সরকার মুসলমানদের উপর হামলা করেছে যা নিন্দনীয় ও ধিক্কার পাওয়ার উপযুক্ত। তিনি বলেন, যারা মানবতা, অসম্প্রদায়িকতার পক্ষে তাদের প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব হলো মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মুজিববর্ষ উদযাপন করবেন কিন্তু কেও মোদিবর্ষ উদযাপন করবেন না। আর এই মুজিবর্ষ অনুষ্ঠানে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না। মোদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গুজরাট, কাশ্মীর, দিল্লীসহ অনেক রাজ্য মুসলমানদের খুন করা হচ্ছে। ভারতের মুসলমানদের উপর চরম নি’র্যাতন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তাই যার হাতে মুসলিম গণহ’ত্যার দাগ লেগে আছে তাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিবে না। সাম্প্রদায়িক উগ্র মুসলমান গনহত্যাকারী কিভাবে বাংলাদেশে আসে। এটা মুসলমানদের কলিজায় আঘাত দেয়ার মতো। ভারতে আমাদের মুসলমান ভাইদের হত্যা করবে আর বাংলাদেশের মাটিতে মোদি আসবে আমরা তাকিয়ে দেখব এটা সহ্য করার মতো না। অবিলম্বে মোদির রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণ বাতিল করা হোক। সফর বাতিল না করলে তৌহিদী জনতা মাথায় কাফনের কাপড় আর হাতে জুতা নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবে।

পরিশেষে তিনি বলেন, যে কোনো সময় মুসলমানদের উপর আক্রমনের পায়তারা চেষ্টা চালাবে তখনিই এই বাংলার মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

উক্ত সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ জামিআ নূরানিয়া তারাপাশা কওমী মাদ্রাসার শাইখুল হাদীস ও মোমেনশাহী ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আল্লামা আব্দুল হক এর সভাপতিত্বে ও মাওলানা আশরাফ আলী (বৌলাই হুজুর) সহ-সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জামিআ নূরানিয়া তারাপাশা কওমী মাদ্রাসার মুহতামীম মুফতী আবুল বাশার এর পরিচালনায় উপস্থিত থেকে বয়ান করেন, ঢাকা মোহাম্মদপুর আল্লাহ করীম জামে মসজিদের খতিব ও মারকাযুল ফিকরিল কুরআনী’র পরিচালক মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি নানপুর জামিয়া ওবাইদিয়া মাওলানা মুহাম্মদ শওকত বিন হানিফ, কিশোরগঞ্জ ইমাম-উলামা পরিষদের সভাপতি ও আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা হযরত মাওলানা শফিকুর রহমান জালালাবাদী প্রমুখ।

উক্ত মহা সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ জেলার আশপাশের হাজার হাজার তৌহদী জনতা উপস্থিত থেকে কসাই মোদিকে জুতা দেকিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

সুত্র bd24live.com