শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৬ অপরাহ্ন
‘তোর এতো বড় সাহস? আমি যে সম্পত্তি কিনার জন্য ঘুরতেছি, তুই সে সম্পত্তি বায়না করার সাহস পাইলি কই?, তোর এতো টাকা আসলো কোথা থেকে?, কোথায় পেলি সেই সাহস? নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোরশেদ আহম্মেদ (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মারধর করার সময় এভাবেই শাসাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে ঢাকার মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জ্যোতির্ময় সাহা অপুর বিরুদ্ধে।শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার পলাশ বাজার গ্রামে ওই এএসপির নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আহত মোরশেদের মাথায় ৭ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মোরশেদ পলাশ বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুক্তভোগী মোরশেদ জানান, গত ১৫ দিন আগে পলাশের সাবেক ইসলাম চেয়ারম্যানের স্ত্রী মরিয়ম বেগমের কাছ থেকে পলাশ বাজার এলাকায় সাড়ে ৬ শতাংশ সম্পত্তি ৪২ লাখ টাকায় কিনার জন্য কথা-বার্তা ঠিক করি। পরে ওই সম্পত্তি কিনার জন্য দুই ধাপে ২০ লাখ টাকা বায়না করি। আগামী এক মাসের ভেতরে পুরো টাকা পরিশোধ করে ওই সম্পত্তি আমার নামে দলিল করার কথা। কিন্তু আমি জানতাম না যে, এই সম্পত্তির ওপর আগে থেকেই এএসপি জ্যোতির্ময় সাহার নজর ছিল। তিনি এই সম্পত্তি কিনতে চান এমন কোনো কথা আগে কখনো স্থানীয়দের বা প্রতিবেশিদের কাছে বলেননি।
শনিবার দুপুরে আমার দোকানে লোক পাঠিয়ে এএসপি জ্যোতির্ময় সাহার কথা বলে আমাকে ওনার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর প্রথমেই জ্যোতির্ময় সাহা আমাকে বাপ-মা তুলে গালাগালি শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমার গালে থাপ্পড় মারার সাথে সাথে ওনার রুমে থাকা জাকির ও শাহিন নামে দুজন আমাকে কাঠের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটানো শুরু করে। আমাকে পিটানোর সময় এএসপি জ্যোতির্ময় সাহা বলতে থাকেন, “তোর এত বড় সাহস? আমি যে সম্পত্তি কিনার জন্য ঘুরতেছি, তুই সে সম্পত্তি বায়না করার সাহস পাইলি কই?, তোর এতো টাকা আসলো কোথা থেকে?, কোথায় পেলি সেই সাহস? তাদের মারপিটের একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এরপর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে ভর্তি।
মোরশেদের মামা মোহাম্মদ টিটু মোল্লা জানান, মোরশেদকে জ্যোতির্ময় সাহার বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে অজ্ঞান অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করানো হয়েছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নরসিংদীর পুলিশ সুপারকেও অবগত করেছি।
এ বিষয়ে জানতে এএসপি জ্যোতির্ময় সাহা অপুর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজকে আমার ছুটি ছিল, তাই আমার নিজ বাড়ি পলাশে আসি। আমার বন্ধু আরিফুল ইসলাম আর আমার দুলাভাই জায়গা কেনার কথা ছিলে। এই ব্যাপারে সব কিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। কিন্তু জায়গা ফাইনাল হওয়ার পর মোরশেদ কি কারণে বায়না করল, এই ব্যাপারে পলাশ বাজার সহ-সভাপতি জয়নাল সাহেবকে নিয়ে আমরা তিন/চারজন বসি মোরশেদের সাথে কথা বলার জন্য।
এক পর্যায় মোরশেদ বলে যার কাছে টাকা বেশি পাবে জমির মালিক তার কাছে বিক্রি করবে। পরে মোরশেদ রেগে গিয়ে বাজারের সহ-সভাপতির সাথে খারাপ আচরণ করে এবং তার গায়ে হাত তোলে। সে সময় সহ-সভাপতি জয়নাল রেগে গিয়ে মোরশেদকে ধাক্কা দিলে সে পাশের এক দোকানে গ্লাস ভেঙে পড়ে যায়। আমি মোরশেদকে কোনোরকম মারধর করিনি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন জানান, পলাশ বাজারের এক ব্যবসায়ীকে পেটানোর খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্র সময় টিভি