শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন
একদিকে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে চরম দুর্ভোগে মানুষ। এরই মধ্যে বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুতের সংযোগ কাটা পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রাজধানীর গ্রাহকদের মধ্যে। গত ১০ জুন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে মন্ত্রীর ঘোষণার পর এই আতঙ্ক আরো জোরালো হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে তারা এখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা পায়নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সংযোগ রাখা বা বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিল বকেয়া থাকার পরেও কোনো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা এনায়েত আলী জানান, তার বাসার চলতি মাস নিয়ে চার মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে। করোনাকালে আয় না থাকায় বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছেন না। তাছাড়া গত কয়েক মাসে অস্বাভাবিক বিল আসায় তিনি তা সমন্বয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পর তিনি উভয় সংকটে পড়েছেন। তার ভাবনা, ‘একবার বিল পরিশোধ করলে আর যদি তা সমন্বয় না করা হয়। তখন কি হবে?
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বিপ্লব মণ্ডল একই রকম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তিনিও তার ভুতুড়ে বিল সমন্বয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। এরই মধ্যে বিল সমন্বয় করতে একদিন বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে না পেয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ভুতুড়ে বিল পুরোপুরি সমন্বয় না করে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্ত’।
তবে ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে বিতরণ সংস্থাগুলো এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, একদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছি। তবে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। জরিমানা মওকুফের ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। তবে আপাতত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। গ্রাহকের স্বার্থ আমাদেরও বিবেচনায় নিতে হয়। বিল সমন্বয়ের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি অস্বাভাবিক বিলের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বকেয়া বিলের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মন্ত্রীর ঘোষণা প্রসঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়াগুলো অবশ্যই লিখিত হতে হবে। এ ব্যাপারে গ্রাহককে লিখিতভাবে কারণ জানাতে হবে। তাকে সময় দিতে হবে। তা না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে গ্রাহক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। তখন আদালত থেকে বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা আসতে পারে। এগুলো আরো ঝামেলার। আর এই করোনার সময়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। তাছাড়া গ্রাহকের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধে কিস্তিরও ব্যবস্থা করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। অনেকেই কিস্তিতে বিল পরিশোধ করছে। বিশেষ করে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা বকেয়া পড়লে কিস্তি সুবিধা দেয়া হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু শিল্প বা বাণিজ্যিক নয়, সব গ্রাহকেরই কিস্তি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সব বিতরণ কোম্পানিই তার গ্রাহকদের এই সুবিধা দেয়।
বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে রাজধানীর একাংশের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী জানান, আমরা গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেইনি। এই দুর্যোগের সময় গ্রাহকের যেভাবে সুবিধা হবে আমরা সেভাবেই বিল নেবো। জুন পর্যন্ত তো জরিমানা হবে না। এখন অন্য গ্রাহকরা সারচার্জ পরিশোধ না করলেও আমরা তার বিল নিচ্ছি। অস্বাভাবিক বিল যেটা বলা হচ্ছে আমরা তা সমন্বয় করছি। এখন মিটার দেখেই বিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।