শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আরেকটি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার জন্ম নিবে ভাণ্ডারিয়ায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, মৃত্যু নিয়ে রহস্য, স্বামী পলাতক বিএনপি সবসময়ই ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে -মাহমুদ হোসেন পিরোজপুর শিক্ষককে হাতুড়িপেটা, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার কাউখালীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন নেছারাবাদে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লোহার পুল ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মঠবাড়িয়ায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, স্বামী ও শ্বশুর আটক পিরোজপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা কাউখালীতে মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নেছারাবাদে ২৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ভান্ডারিয়ায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা! মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ পিরোজপুর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর কমিটি গঠন: সোহাগ সভাপতি, মিঠু সম্পাদক কাউখালীতে অপহরণের তিন মাস পর সপ্তম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার কাউখালীতে জেলের মরদেহ উদ্ধার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীকে প্রাণ নাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দেশ কাঁপানো ছাত্রদের মাথায় মামলার বোঝা

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দেশ কাঁপানো ছাত্রদের মাথায় মামলার বোঝা

২০১৮ সালের আজকের দিনে অন্য রকম ছিল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। সড়ক ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমেছিল রাজপথে। রাজধানী অচল করে দেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই আন্দোলনের দুই বছর পার হলেও পূরণ হয়নি তাদের দাবি। এমনকি আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো এখনো চলমান। তারা আজও হয়রানির শিকার হচ্ছে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা থেমে যায়নি। তারা গঠন করেছে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ (নিসআ)। যার মাধ্যমে দাবি আদায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

নিসআর যুগ্ম আহ্বায়ক ইনজামুল হক রামিম  বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। কোনো বিচারও হয়নি। উল্টো শিক্ষার্থীদের জড়ানো হয় ভিত্তিহীন মামলায়। মামলাগুলো এখনো চলমান। প্রশাসন চাইলে সন্ত্রাসীদের বিচারের সম্মুখীন করতে পারে। ইচ্ছা করলে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে পারে।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের একজন, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তারেক আজিজ ৯টি মামলার ‘খড়্গ’ নিয়ে দুই বছর ধরে ঘুরছেন। তিনি  বলেন, ‘প্রতি মাসেই আমাকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। মাঝেমধ্যে বাড়িতে পুলিশও আসে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের জেরেই রাষ্ট্র নতুন সড়ক আইন পাচ্ছে। অথচ আমাদের মামলার বোঝা নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। মামলার কারণে আমি পড়ালেখাও ঠিকমতো করতে পারছি না।’

তারেকের মতো আরো অনেক শিক্ষার্থীই মামলার খড়্গ নিয়ে দিন পার করছে। মামলার জন্যই কেউ কেউ পড়ালেখা শেষে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারছে না। কেউ কেউ বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট পর্যন্ত করতে পারছে না। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীতে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীব নির্মমভাবে নিহত হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ৪ আগস্ট জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় হেলমেটধারীরা। সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়েও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এতে উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়। এর পরও দমে যায়নি শিক্ষার্থীরা। পরে অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসে সড়ক থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরে শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, দুর্ঘটনার পরের রাতেই ফেসবুকে মোস্তফা রিজওয়ান রাহাতের খোলা ইভেন্ট এই আন্দেলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয় সারা দেশে। ‘সড়ক হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই’ নামের সেই পেজের মাধ্যমে একত্র হয় শিক্ষার্থীরা। পরে সারা দেশের স্কুল-কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়লে তা বৃহত্তম ছাত্র আন্দোলনে পরিণত হয়। সেই রাহাতের হাত ধরেই ‘নিসআ’র আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৮ সালের শেষ দিকে। তিনি এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে থাকলেও ১১ সদস্যের কমিটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

শহীদ রমিজদ্দিন কলেজের সামনের সড়কেই সূচনা হয়েছিল নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের। ৯ দফা দাবি জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সেই দাবিগুলো পাঠ করেছিলেন রমিজউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শাহিদুল ইসলাম আপন। তিনি  বলেন, ‘আমরা রমিজউদ্দিন স্কুলের সামনে একটি আন্ডারপাস চেয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে। মোটরসাইকেল আরোহীদের দুজনই হেলমেট পরছেন। এ ধরনের ছোটখাটো কিছু দাবি পূরণ হয়েছে; কিন্তু সড়কে মৃত্যু তো থেমে নেই। নতুন যে সড়ক আইন হয়েছে, সেখানেও নানা ফাঁকফোকর রয়েছে। ফলে আমাদের দাবি পূরণ এখনো অনেক দূরে। আমরা চাই সড়ককে নিরাপদ রাখতে। এ জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম নিসআর মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাব।’

উত্তরা ও বনানীতে আন্দোলন করেছিলেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইনজামুল হক। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি সড়ক আইন করা হলেও তার কোনো বাস্তব প্রয়োগ আমরা দেখতে পাইনি। এমনকি রাজীব-দিয়া হত্যা মামলাও পুরনো আইনের ভিত্তিতে পরিচালনা ও রায় প্রদান করা হয়। এই রায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই সন্তুষ্ট হতে পারেনি।’

রামপুরা ব্রিজে আন্দোলন করেছিলেন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত। তিনি বলেন, ‘আমাদের দু-একটি দাবি পূরণের পদক্ষেপ দেখতে পেলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের ভাই-বোন, বন্ধু বা স্বজন কাউকে যেন সড়কে প্রাণ হারাতে না হয়। কিন্তু সড়কে মৃত্যু থেমে নেই। তাই যত দিন পর্যন্ত আমাদের স্বপ্নের নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা হবে না তত দিন আমরা থামব না।’

নিসআ আন্দোলনের দুই বছর উপলক্ষে গত ২৫ জুলাই রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। তাদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো—শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া, ফুটপাত-ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সবাইকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পরিকল্পিত বাস স্টপেজ নির্মাণ, দুর্ঘটনার বিচারকাজ দ্রুত করা, চালকদের প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, বিকল্প সড়কব্যবস্থা ও সাইকেল লেন করা এবং ট্রাফিক আইন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন










© All rights reserved © 2025 pirojpursomoy.com
Design By Rana