শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
আমরা সবাই জানি যে বিষাক্ত সাপ শুকনো স্থানে থাকে, বর্তমানে প্রচন্ড গরম ও বর্ষা মৌসুম হওয়ার ছোট ছোট ঝোপ ঝারে পানি চলে আসায় সাপের নিরাপদ আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে বিষধর সাপসহ নানা প্রজাতির সাপ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য এখন লোকালয়ে চলে এসেছে। ফলে সারা দেশের মতো ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সর্বত্র সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ কারনে বেশির ভাগ দরিদ্র গ্রামবাসীরাই সাধারনত সাপের কামড়ের শীকার হচ্ছেন। সাপের কামড়ের বিষক্রিয়ার প্রভাব দূর করতে বা কমাতে সাধারনত দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দুঃখজনক হলেও রাজাপুর ৫০ সজ্জার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিন ‘অ্যান্টিভেনম’ নেই। এন্টিভেনমের সঙ্গে যে ড্রাগের প্রয়োজন, তাও এই হাসপাতালে নেই।ফলে সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে উপজেলাবাসীকে আতঙ্কে থাকতে হয় সারাক্ষণ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয়ে চিকিৎসক এ ঝুঁকি না নিয়ে পাঠিয়ে দেন বিভাগীয় শহর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে। এতে অনেকেরই জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে কোন কোন সময়ে রোগী হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যাচ্ছে।
গবেষকদের মতে, সবচেয়ে বেশি বর্ষা মৌসুমে সর্পদংশনের ঝুঁকিতে থাকেন গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ। তাছাড়া গ্রামে রান্নাঘর এবং গোলাঘরে ইঁদুরের উপদ্রব হওয়ায়, সাপের বিচারণও সেখানে বেশি থাকে। কারণ সাপ সাধারণত ইঁদুর জাতীয় প্রাণী খায়। কাজেই গ্রামের মানুষের বাড়ির আশেপাশেই সাপের বিচরণ বেশি থাকে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু এখানে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালটিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ। স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকেও এই ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে বিষধর সাপের এন্টিভেনাম ভ্যাকসিন উৎপাদন হয় না তাই বাহিরের দেশ থেকে আনতে হয়। বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি ইনসেপটা এন্টিভেনাম বাজারজাত করলেও চড়া দামের বিক্রির কারণে ওষধ ব্যবসায়ীরা ফার্মেসিতে তা রাখেন না। ফলে সাপে কামড়ের রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরিশাল যেতে হয়। কারন সাপে কাটা রোগীর সেনসিভিটি টেস্ট করতে হয় যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সাপের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হলে প্রতিষেধক দেয়ার মতো সক্ষমতা গ্রামের সাধারন অনেক মানুষের নেই। এক ফাইল ভ্যাকসিনের দাম এক হাজার টাকা। একজন রোগীকে ১০ ফাইল ভ্যাকসিন দিতে হয়। এই অবস্থায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ভ্যাকসিন আনতে অনেক সময় লাগে। ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপরও অ্যান্টিভেনম পুশ করার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে আইসিইউতে নিতে হয়।যা মেইনটেইনের কোনো ব্যবস্থা নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অর্থাৎ লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় ইনজেকশন দেয়ার পর রোগীর শরীরে যে ইফেক্ট পড়বে তা মোকাবিলা করা উপজেলায় পর্যায়ে ডাক্তারদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে সাপে কাটা রোগীদের দূরে বিভাগীয় শহর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করতে হয়। এছাড়াও গ্রামের মানুষরা সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে এখনো সচেতন না। যার কারণে তারা এখনও রোগীদের ওঝা বা কবিরাজ দিয়ে ঝাঁড়ফুক করিয়ে থাকে।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল বলেন, সাপের কামড়ের চিকিৎসার চর্চা সচরাচর নেই। দীর্ঘদিন থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। এন্টিভেনমের সঙ্গে যে ড্রাগের প্রয়োজন, তাও হাসপাতালে নেই। তাই এমন রোগী আসলে আমরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। ১২ বছর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছিলো।
সুত্র bd24live.com