শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পিরোজপুর শিক্ষককে হাতুড়িপেটা, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার কাউখালীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন নেছারাবাদে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লোহার পুল ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মঠবাড়িয়ায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, স্বামী ও শ্বশুর আটক পিরোজপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা কাউখালীতে মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নেছারাবাদে ২৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ভান্ডারিয়ায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা! মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ পিরোজপুর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর কমিটি গঠন: সোহাগ সভাপতি, মিঠু সম্পাদক কাউখালীতে অপহরণের তিন মাস পর সপ্তম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার কাউখালীতে জেলের মরদেহ উদ্ধার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীকে প্রাণ নাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা ভাণ্ডারিয়ার চাঞ্চল্যকর আসমা হত্যার বিচার দাবিতে পিরোজপুরে মানববন্ধন কাউখালীতে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে গ্রেফতার
মঠবাড়িয়ার অমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু

মঠবাড়িয়ার অমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু

জুলফিকার আমীন সোহেল,বিশেষ প্রতিনিধি

পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের সাবেক সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার (৯২) পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ভোরে তিনি আমেরিকার ফ্লোরিডায় তার মেয়ের বাসায় আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পারিবারিক সূত্র মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় আমেরিকায় তার বড় মেয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

১৯৭১ সালে আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার মঠবাড়িয়ায় পিস কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে বিশাল এক রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালানোর অভিযোগে ২০১৪ সালে দায়ের হওয়া যুদ্ধাপরাধের মামলায় তিনি আমৃত্যু দন্ডিত হন। ওই মামলা দায়েরের আগেই তিনি দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পালিয়ে যান। গত দশ বছর ধরে তিনি আমেরিকায় পলাতক ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠবাড়িয়ার ৩৬ জন মানুষ হত্যা, ২০০ জনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ও ৫৫৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করাসহ ৫টি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি সেক্টর কমান্ডারস ঘোষিত ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় অর্ন্তভূক্ত ছিলেন।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বারের উপজেলার টিকিকটা ইউনিয়নের সূর্যমণি গ্রামের ২৪ হিন্দু বাঙালিকে হত্যার দায়ে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজাকার জব্বার ইঞ্জিনিয়ারসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময়ে সূর্যমণিতে রাজাকারদের গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জ্ঞানেন্দ্র মিত্র (৬২) বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও আরো ৬০/৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ওই বছর বছর ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালে মামলা স্থানান্তরিত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচ ধরনের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ওই বছর ১২ মে জব্বারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি বিচারপতি এনায়েতুর রহীম এর নেতৃত্বাধিন গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ দেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় পর্টি (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারের নেতৃত্বে উপকূলীয় মঠবাড়িয়ায় গড়ে উঠেছিল সংঘবদ্ধ রাজাকার বাহিনী। মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যা, ভীমনলী গ্রামের বাড়ই বাড়ি গণহত্যা ও মঠবাড়িয়ার আটজন মেধাবী ছাত্র হত্যাসহ ফুলঝুড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ লুটপাট আর অসংখ্য হিন্দু বাঙালিকে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করার মত অপরাধে তিনি অভিযুক্ত। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য দুইবার সংসদ নির্বাচিত হন। একবার এরশাদ সরকার ও একবার বিএনপির আমলে তিনি এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। তবে ১৯৮৬ সালে তিনি ভোট ডাকাতির দায়ে এলাকার মানুষের কাছে বিতর্কিত হন। তার ভোট ডাকাতির প্রতিবাদের বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন ক্ষোভে উত্তাল হলে আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর গুলিতে ৪ জন নিহত হন। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে পিরোজপুর-৩ আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
‘৭৫ পরবর্তী তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হলেও এরশাদ আমলে মূলত তার রাজনৈতিক আবির্ভাব ঘটে। এরপর তিনি এরশাদের আস্থাভাজন হিসেবে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতিও নির্বাচিত হন। পরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও তিনি বিএনপিতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
১৯৭১ সালে সাবেক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে গড়ে উপকূলীয় মঠবাড়িয়া অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বিশাল এক রাজাকার বাহিনী। উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ক্ষেতাছিড়ায় গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় সহস্রাধিক আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। এলাকায় হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুটতরাজ, গণহত্যা ও নারী নির্যাতন চালায়।
আদালতের তৎকালীন বিচারিক হাকিম মো. কবির উদ্দিন প্রামানিক মামলাটি গ্রহণ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৬ (৩) ধারায় তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ মামলাটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারভুক্ত করতে সুপারিশ করে। এ কারণে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল এ মামলার চার দফা তদন্ত সম্পন্ন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় শান্তি কমিটির (পিস কমিটি অব পাকিস্তান) চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ইসকান্দার মৃধার নেতৃত্বে একদল রাজাকার বাহিনী দুটি গণহত্যাসহ ৮ মেধাবী ছাত্র হত্যা, হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করে।
জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জনের একটি রাজাকার বাহিনী একাত্তরের ৬ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে উপজেলার আ্গংুলকাটা গ্রামে তাদেও বাড়িতে হানা দেয়। এসময় তারা ৩০জনকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় বাবা জিতেন্দ্র নাথ মিত্র ও বড়ভাই (মামলার বাদি) জ্ঞান্দ্রে মিত্রকে ধরে নেওয়া হয়। এরপর ৩০ জনকে সূর্যমণি বেড়িবাঁধের পাড়ে নিয়ে গুলি করে রাজাকার বাহিনী। সেদিন ২৪ জন শহীদ হন। বাবা জিতেন্দ্র নাথ শহীদ হন। তবে ভাই জ্ঞানেন্দ্র নাথ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান। সেদিন শহীদ হন জিতেন্দ্র মিত্র, সুরেন্দ্র মিত্র, মুকুন্দ মিত্র, ফনিভূষন, পরিমল মিত্র, অরুন মিত্র, শৈলান মিত্র, ঝন্টু মিত্র, নিহার মিত্র, সুধীর মাস্টার, সুধাংশু হালদার, বিরাংশু হালদার, মধুসূদন, প্রিনাথ, অন্যধা হালদার, অনীল হালদার, নগেন কির্ত্তনিয়া, সত্যেন্দ্র রায়, হরেন মাঝি, হিমান্ত হালদার, সিতানাথ হালদার, জিতেন মৃধা, নিহার মিত্র, জিতেন মাঝিসহ ২৪ জন।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আজও এসব পরিবার কোন স্বীকৃতি পায়নি। এ মামলার বাদী জ্ঞানেন্দ্র মিত্র গণহত্যার বিচার দাবি করে মামলা দায়েরের পর হত্যাশায় ও বিনা চিকিৎসায় ২০১২ সালে মারা যান।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আমৃত্যু কারাদন্ড রায় ঘোষণার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মঠবাড়িয়া শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে যুদ্ধাপরাধী জব্বারের ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলেন।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন










© All rights reserved © 2025 pirojpursomoy.com
Design By Rana