শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
স্বরূপকাঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে নির্মানাধীন ত্রাণের ঘরের মালামাল বাড়ি পর্যন্ত নিতে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে খরচ করতে হচ্ছে দশ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা।
উপজেলা সদরের চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে (এক স্থান থেকে অন্যটির দুরত্ব প্রায় ২/৩ কিঃমিঃ) ইট, বালু, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মান সামগ্রীসহ ১০ মেঃ টনেরও বেশী মালামাল নিজ খরচে প্রত্যন্ত এলাকার বাড়ি পর্যন্ত নিতে হয়েছে প্রত্যেক পরিবারকে।
প্রতিটি ঘর নির্মানের জন্য ৩৩ শ‘ পিস ইট, ২২৫ টিন আস্তর বালু, ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট, ৬০ সিএফটি ইটের খোয়া, সাড়ে ১৫ ঘনফুট চেড়াই কাঠ, দুই জোড়া লোহার দরজা,তিন জোড়া লোহার জানালা,২০ কেজি রড ও ২৫ পিস টিনসহ কিছু লোহা লক্কর দেয়া হচ্ছে। অনেকে এতগুলো নির্মান সামগ্রী একসাথে নিতে না পারায় একাধিকবার ট্রলার ভাড়া করে নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন যায়গা থেকে এসব মালামাল ট্রলারে উঠানোর সময় অতিরিক্ত লেবার খরচ পরিশোধ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। ইটসহ ভারী মালামাল ট্রলারে করে বাড়ির কাছাকাছি খাল পাড়ে নেয়ার পরে আরেক দফা টানা হেচড়া করে নির্মানস্থলে নিতে হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের তত্বাবধানে এসব ঘর নির্মান করা হলেও মালামাল পরিবহনের জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো খরচ দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে এ উপজেলায় নতুন করে ৪৮ টি ঘর নির্মান করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি ঘর নির্মানে ব্যয় হবে একলাখ বিশ হাজার টাকা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের তত্বাবধানে এসব ঘর নির্মান করা হলেও মালামাল পরিবহনের জন্য তেমন কোনো বরাদ্ধ রাখা হয়নি।
বলদিয়া ইউপির রাজাবাড়ি গ্রামের মাকসুদা বেগম ও তার মেয়ে শায়লা জাহান বলেন, স্বরূপকাঠির ছারছীনা ভাটায় গিয়ে ইট, খোয়া, টিন এবং প্রায় ৪ কিঃ মিটার দুরে জগন্নাথকাঠি চেয়ারম্যান বাড়ির ঘাটে গিয়ে বালু, সিমেন্ট ও আরেকদিন দরজা জানালা ও একটি স্ব-মিল থেকে চেড়াই কাঠসহ ঘরের মালামাল আনতে পনের হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও পোতা (ভিটি) ভরাট করতে সাত হাজার টাকার ভিট বালু তাদের ক্রয় করতে হয়েছে। খায়েরকাঠি গ্রামের নির্মল মল্লিক বলেন, ঘরের মালামাল বাড়ির কাছে বড় খালপাড় পর্যন্ত আনতে তার ১২/১৩ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। মালামাল বাড়ির কাছে খালের পাড়ে আনলোড করার পরে ২জন লোককে দুইদিনে দুই হাজার টাকা দিয়ে ঘর নির্মানস্থলের কাছে এনে রাখি। ছাড়াও ৬ হাজার টাকার ভিটির বালু কিনতে হয়েছে তার।
নির্মল মল্লিক বলেন, এ ছাড়াও ৩জন মিস্ত্রিকে প্রতিদিন দুপুরে এক বেলা খাবার দিচ্ছেন তিনি। ব্যাসকাঠি গ্রামের মো.হেলাল, চাঁদকাঠি গ্রামের সুফিয়া বেগম, আমতলার সুদেব মন্ডল, মৈশানীর আঃ রহিম, সারেংকাঠির হেলেনা, রুমা বেগমসহ ঘর পাওয়া প্রত্যককে মালামাল আনতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
স্বরূপকাঠি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস জাহান বলেন, সদর ইউনিয়নের মানুষ ১০/১২ হাজার টাকায় মালামাল নিতে পারলেও দুরের দরিদ্র মানুষের ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পিআইওর কাছে ঘরের এস্টিমেট চেয়েছিলাম তিনি সেটি দেননি।
এ বিষয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও গৃহ নির্মান বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মানষ কুমার দাস জানান, একলাখ বিশ হাজার টাকায় একটা ভাল মানের ঘর করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে মালামাল পরিবহনে কিছু সমস্যা হলেও, আমরা চেষ্টা করছি ঘরগুলো যেন টেশসই এবং সুন্দর হয়।
সুত্র রুপালী বার্তা