রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০০ অপরাহ্ন
জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক গৃহবধুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ তার নাম ইয়াছমিন আক্তার (১৯)। সে বিশারাবাড়ী গ্রামের প্রবাসী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ও কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা থানার সীমানার পাড় গ্রামের আবদুল আউয়াল মিয়ার মেয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে উপজেলার বিশারবাড়ী গ্রামে।
নিহতের পরিবারের দাবী, ইয়াসমিনকে হত্যা করার পর তাকে পাখার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে নিহতের শ্বশুর বাড়ীর লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত প্রায় ৮/৯ মাস আগে বিশারাবাড়ী গ্রামের নুর মুহাম্মদের ছেলে প্রবাসী সাইফুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা থানার সীমানার পাড় গ্রামের আবদুল আউয়াল মিয়ার মেয়ে ইয়াছমিনের। প্রবাসী সাইফুল ছুটিতে এসে বিয়ে করলেও করোনার কারনে পুনরায় প্রবাসে যেতে পারেনি । বিয়ের পর থেকেই স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মোটা অংকের যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো ইয়াছমিনকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার সালিস-সভা ও হয়েছিল। গত এক সপ্তাহ আগেও সালিশের মাধ্যমে ইয়াছমিনকে নিয়ে আসে তার শ্বাশুরবাড়ির লোকজন। শনিবার দুপুরে ওই বাড়ি থেকে ইয়াছমিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে নিহতের স্বামী সাইফুল ইসলাম ও পরিবারের লোকজন। নিহতের পরিবারের দাবী হত্যা করে পাখার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াছমিনের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তার স্বজনরা।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই শুধু গলায় ফাঁসের দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ইয়াছমিনের পিতা আউয়াল মিয়া জানান, ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে মেয়ের জামাই সাইফুল ইসলাম। এর আগেও জমি বিক্রি করে প্রায় ৭ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি মেয়ের সুখের আশায়। গত শুক্রবার মেয়ে ইয়াছমিন তাকে ফোনে জানায় তাকে যৌতুকের জন্য বেদড়ক পিটিয়েছে তার শশুরবাড়ীর লোকজন। টাকা না দিলে রাতে তাকে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি প্রদান করছে। যে কোন ভাবে একটা ব্যবস্থা করে আমাকে বাঁচাও। উত্তরে তার বাবা বলে শনিবার সকালে আসবো। শনিবার সকাল থেকে মেয়ের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও কেউ ফোন না ধরায় মনে সন্দেহ জাগে। সকাল ১১টার সময় পুলিশ লাশ উদ্বার করে তাদের ফোনে জানায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের ফোন পেয়ে সারারাত ঘুমাইনি। শেষ পর্যন্ত যৌতুকের টাকার জন্য তারা আমার মেয়েটিকে মেরেই ফেললো। এ খবরে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে ইয়াছমিনের মা। নিহতের চাচা ইকবাল হোসেন জানান, নৃশংসভাবে আমার ভাতিজিকে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার স্বামীর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে চাইলে গ্রহন করছেনা কসবা থানা পুলিশ ।
কসবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিশারাবাড়ী থেকে গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।