শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চড়া শাকসবজি ও নিত্যপণ্যের বাজার। বর্তমানে বাজারে ৫০ টাকার নিচে যেন মিলছেই না কোনো ধরনের সবজি। পাশাপাশি খুচরা বাজারে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল, চাল, চিনি ও রসুনের। তবে নতুন করে আবারও দাম বেড়েছে সবজির বাজারে। সবজি ভেদে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে বাড়তি রয়েছে শাকের দামও। আর বাজারে খাসির মাংসের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, ডাল ও গরম মসলার দাম। তবে ডজনে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে, আবার কিছুটা কমেছে। আকাশ ছোঁয়া কাঁচা মরিচের দাম কিছু টা কমেছে । তবে সরবরাহ কম থাকায় সব্জির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অপর দিকে বিভিন্ন অযুহাতে দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।
আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের সবজির দোকান গুলোতে। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে সবজির দাম। সবজি কিনতে হিম শিম খাচ্ছে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া দিন মজুর ,নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ গুলো।
এদিকে শাকসবজির নতুন করে দাম বাড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতার। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির যথোপযুক্ত সময় না হওয়ায় প্রতি বছর এ সময়ে শাকসবজির দাম বাড়তি থাকে। এবার বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দাম আরও বেড়েছে। আর ক্রেতার অভিযোগ, বাজারে একটি জিনিসের দাম বাড়লে অপরটির দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতা। দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কাজ করছে। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ইতিমধ্যে দু’এক প্রকারের সব্জির দাম কিছুটা কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, সিম ১২০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন আকারভেদে ৭০ থেকে ১১০ টাকা, ধনিয়াপাতা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে প্রতি কেজি দেশি শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০থেকে ৮০টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০, করলার দাম কমে হয়েছে ৮০থেকে ১০০, মানভেদে ঝিঙা-ধন্দুল ৫০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৬০, কাঁকরোল আকারভেদে ৭০, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০, পটল ৬০ থেকে ৭০, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০, মুখিকচু ৬০, আলু ৪৫থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০, মিষ্টি কুমড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে দাম অপরিবর্তিত আছে টমেটো, লাউ, জালি কুমড়া ও কাঁচকলার।
আরও দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, প্রতিহালি কাঁচকলা ৪০, প্রতি পিস জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০, লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি আঁটিতে (মোড়া) তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে বাজারে লালশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলা ও কলমি শাক ১৫, পুঁইশাক ৩০, ডাঁটা শাক ২০, লাউ ও কুমড়ার শাক ৪০ টাকা।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ডাবলি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, অ্যাঙ্কার ৫০ থেকে ৫২, দেশি মসুর ডাল ৯০ থেকে ১২০ টাকা। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০২ টাকা ও চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। এসব বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পায়জাম ৪৮, মিনিকেট ৫৮, জিরা মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬, নাজিরশাইল ৫৫, পোলাও চাল (খোলা) ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।
এদিকে এসব বাজারে খাসির মাংসের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত (আগের দাম) রয়েছে গরুর মাংস, মাছ ও মুরগির দাম। কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা, গরু মাংস ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। বর্তমানে এসব বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২২০, সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। তবে অপরিবর্তিত আছে মাছের বাজার।
বাজারে প্রতি কেজি রুই (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, মৃগেল ১৬০ থেকে ২৫০, পাঙাশ ১০০ থেকে ১৬০, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০, তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১৫০, কই ১৪০ থেকে ১৬০, পাবদা ২৭০ থেকে ৩০০, কাঁচকি মাছ ২৫০ থেকে ৩০০, মলা ২৮০ থেকে ৩০০, দেশি টেংরা ৩৫০ থেকে ৪৫০, শিং (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০, দেশি চিংড়ি (ছোট) ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে প্রতি সোয়া কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০, প্রতি ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশে ৫৫০ টাকা কেজি দরে, প্রতি ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।
পেঁয়াজ ও আদার বাজার অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে রসুনের। এসব বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আর বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে, চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা ও কেরালার আদা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকরতা জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বছরের শুরুতেই আগাম দুই দুই বার বন্যা হওয়ার কারণে বিভিন্ন জাতের সবজির পাশাপাশি অন্যান্য ফসল ও নষ্ট হয়েছে। তবে সেটা আমরা পুষিয়ে নিয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, আশুগঞ্জ উপজেলায় মোট আবাদী জমির পরিমান ৪৭৩৫ হেক্টর। তন্মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আমন ধান১৩%আর নানা ধরনের সব্জি ক্ষতি হয়েছে ১০%। তবে বাজারে সব্জির দাম কেন এত বেশি তার কারন তিনি বলতে পারেননী।
তবে ব্যবসায়ী মহলের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় হয়তো সবজির দাম বেড়েছে। তারা আরো জানান অল্প কিছু দিনের মধ্যে সব্জির দাম কমে আসবে।
এ দিকে নিম্ন আয়ের মানুষের যেন মরার উপর খাড়ার গায়ের মত অবস্থা হয়েছে। মহামারী করোনা ভাইরাস নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের উৎস কমে গিয়েছিল। তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম চলে গেছে তাদের নাগালের বাইরে। তাদের এখন খেয়ে পুড়ে বেচে থাকাই যেন দায় হয়ে গেছে।