শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
দখল, দূষণ আর সরকারী অব্যবস্থাপনার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে । এক সময় এই খাল দিয়ে বড় বড় পণ্যবাহী নৌকার সমাগম আর বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও বর্তমানে খালটি এখন সরু ড্রেনে পরিণত হয়ে গেছে ।
জেলা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালটিকে ‘ টাউন খাল’ নামেই চেনেন শহরবাসী। তবে আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও বাজারের বর্জ্য ফেলার কারনে এক সময়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সৌন্দর্যময়ী এই খালটি দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এতে করে একদিকে খালের পানি দূষিত হচ্ছে, অন্য দিকে এ খালের উপর ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারণে খাল ভরে গিয়ে খালের গভীরতা ও প্রশস্ততা উভয়ই কমে গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অবহেলায় খালটি এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হলেও দেখার কেউ নেই। সৌন্দর্যময়ী এই খালটি শহরের টানবাজার ও কান্দিপাড়া এলাকা দিয়ে তিতাস নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে শহরের কাজীপাড়া, মধ্যপাড়া, পৈরতলা হয়ে গোকর্ণঘাট গ্রামের পাশ দিয়ে আবার তিতাস নদীতেই মিলিত হয়েছে।
এক সময়ে বর্ষাকালে এই খাল দিয়ে বাহারী নৌকা চলাচল করতো । এখন আর খালের সেই আগের জৌলুস নেই। খালটি এখন মৃত প্রায়। এই খালে এখন আর কোন নৌকা চলে না।
পৌরসভার উদ্যোগে ২০০৮-১২ সাল পর্যন্ত সৌন্দর্য বর্ধনের নামে শহরের কান্দিপাড়া এলাকা থেকে ঘোড়াপট্টির পুল (ফকিরাপুল) পর্যন্ত খালের দুই পারে সিসি ব্লক, ফুটপাত ও রেলিং স্থাপন করা হয়। সৌন্দর্য বর্ধনের পরে জেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা কেউই খালের রক্ষণাবেক্ষণ করেনি।
শহরে কান্দিপাড়ার বাসিন্দা শাহিন বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আগে খালে খরস্রোতা পানি প্রবাহিত হতো। নষ্ট হয়ে যাওয়া এই খাল এখন শুধুই স্মৃতি।’
নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত ২১ আগস্ট শহরের খালপাড় থেকে গোকর্ণঘাট পর্যন্ত নোঙর’র উদ্যোগে পরিদর্শন শেষে আশ্বস্ত করেছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড খুব শিগগিরই টাউন খালের সীমানা নির্ধারণ, উচ্ছেদ, খনন, রিটার্নিং ওয়াল, দুই পারে পায়ে হাটার রাস্তাসহ নান্দনিক করে তুলতে প্রকল্প প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। নোঙরের দাবি ছিল উচ্ছেদ অভিযান দিয়ে শুরুটা হউক, ধাপে ধাপে পরবর্তী কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ হতে পারে, কিন্তু দুঃখের বিষয় গত তিন মাসেও উল্লেখ করার মতো কোন কাজ চোখে পড়েনি।’তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে টাউন খালটি উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাশ বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যেই আমরা টাউন খালের সীমানা নির্ধারণ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। পর্যায়ক্রমে খননসহ বাকি কাজ শেষ করব।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, ‘আমরা বার বার রেস্টুরেন্ট ও বাড়ির মালিকদের বলে আসছি কিন্তু তারা কথা শোনে না। রাতের বেলায় ময়লা ফেলে খালটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, তাহলেই খালটি আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।’ সে জন্য তিনি খালের আশপাশের এলাকাজুড়ে বসবাসরত লোকজনের প্রতি খালে ময়লা আবর্জনা না ফেলার ও আহবান জানান।