শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১০ অপরাহ্ন
পিউবালা, ব্যাস এইটুকই। তাতেই তার পরিচিতি পুরো বরগুনা পৌর এলাকা জুড়ে। কারণটাও খুব সাধারণ। পাঁচ জনের কাছে চেয়ে চিন্তে তার সংসার চলতো। আর সংসার বলতে, ঘরে বাইরে তিনি একাই। বয়সের ভারে ন্যুব্জ পিউবালা বছর কয়েক ধরে ঘরের কোনে বন্ধী। তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন পৌর মেয়র শাহদাত হোসেন।
পাসপোর্ট গলির পিউবালার মতো শহীদ স্মৃতি সড়কের প্রায়ত অনন্ত বাবুর স্ত্রীও নি:সন্তান। তার চার কূলের কেউ বেঁচে নেই। পৌর পিতা শাহদাত হোসেন তারও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। ভোটের মাঠে তাদের নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। তবে তারা বলছেন, দুর্দিনে যে পাশে দাঁড়িয়েছেন, ভোটটা তাকেই দিবেন।
এতো গেল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী শাহদাত হোসেনের কথা। বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ অবস্থান নেতাদের কাছে অন্যরকম। একটা ঘটনার বর্ণনাই যথেষ্ট। তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মিন্টুর বিরুদ্ধে মামলার পর তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। তখন তার পক্ষে মামলায় লড়ে তাকে কারামুক্ত করেছিলেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারী বরগুনা পৌরসভার নিবাচন। ইতোমধ্যেই ভোটের মাঠে কার পক্ষে নেতা, আর কার পক্ষে জনতা দিনদিন সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রতীক নিয়ে নিবাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রাথীরা। ভোটররা বলছেন, দুই বারের মেয়র শাহদাত হোসেন দুর্যোগ-দুর্দিনে পৌরবাসীর পাশে থেকেছেন। করোনাকালে সবাই যখন ঘরে মেয়র তখন ত্রাণ নিয়ে ছুটেছেন মানুষের ঘরে ঘরে।
গেল বারের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রাথী কামরুল আহসান মহারাজ নেতাকমীদের আইনী সহায়তা দিয়েছেন। নিবাচনে পরাজয়ের পর ভোটোরদের কাছে ঘেষেননি। পৌর এলাকায় তার ভোট ব্যাংকও নেই। তার মূল শক্তি নৌকা প্রতীক আর মেয়রবিরোধী আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাদের কারো কারো ভোট ব্যাংকও রয়েছে। গেল জাতীয় সংসদ নিবাচন ঘিরে নেতাদের মধ্যে তৈরী হওয়া আস্থাহীনতা এখনো রয়ে গেছে। যেটা ভোটের মাঠে নৌকাডুবির কারণ হতে পারে।
বরগুনায় বিদ্রোহী নতুন নয়
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন। অনেক ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তখনকার স্বতন্ত্র প্রাথী দেলোয়ার হোসেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের কলেজ সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন গোলাম সরোয়ার টুকু। তিনি বিপুল ভোটে ভিপি হয়েছিলেন। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি।
পরবর্তীতে দলীয় মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা খলিলুর রহমান, বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির নেতা।
বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী নির্বাচন করেছিলেন তৎকালীন মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শাজাহান মিয়া। বিপুল ভোটে শাহদাত হোসেন মেয়র নিবাচিত হন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনীত ছিলেন বরগুনা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সাবেক জেলা ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোঃ শহিদুল ইসলাম পলাশ।
পরবর্তীতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুলতান মাহমুদ কবির। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন রাসেল ফরাজী।
পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ অলি। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য মোঃ মনিরুল ইসলাম মনির বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান জেলা যুবলীগের নেতা আরিফ হোসেন মোল্লা। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন রাসেল ফরাজী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান।
বিদ্রোহীরা একাট্টা
বরগুনায় জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় নিবাচনে, ২০০১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়েছেন তারা নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রাথীর পক্ষে কাজ করছেন। যারা গেল জাতীয় সংসদ নিবাচনে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভুর বিপক্ষে কাজ করেছেন। একমাত্র মেয়র শাহদাত হোসেন প্রকাশ্যে সম্ভুর পক্ষে মনোনয়নের জন্য মাঠে ছিলেন। যদিও নিবাচনে দলীয় মনোনয় পেয়ে সম্ভু নিবাচিত হয়েছেন।
এবার শাহদাতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অন্তত শীর্ষ পর্যায়ের দশজন নেতা দলীয় কমীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেই নেতাদের কারো কারো সঙ্গে শাহদাতের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। যে সম্পর্কের কারনে আওয়ামী লীগের একাট্টায় ভাটা পড়ছে। চিড় ধরতে শুরু করেছে সম্পর্কে।
তাদের বক্তব্য
মেয়র শাহদাত বলেন, জনগনের ভালোবাসার কাছে নতি স্বীকার করে নৌকার বিপক্ষে ভোটে দাড়িয়েছি। গেল নিবাচনে ভোটাররা নৌকার বিপক্ষে গিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছে, সেই ধারাবাহিকতা এবারও থাকবে। তিনি আরো বলেন, জনসমর্থন যাচাই না করেই প্রাথী চাপিয়ে দেয়া হয়, তাই বিদ্রোহীদের কাছে বারবার নৌকার প্রাথীরা পরাজিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কালো টাকা ছড়িয়ে শাহদাত পরপর দুইবার মেয়র হয়েছেন। পৌরসভা লুট করেছে। এবার আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা একাট্টা, তারা ভোটের মাঠে দাতভাঙ্গা জবাব দিবে।
রিাটানিং কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, নৌকা এবং জগ প্রতীকের প্রাথীর মধ্যে সংর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সতন্ত্র প্রাথী শাহদাতের বিপক্ষে যুবলীগের ব্যানারে পাল্টা কর্মসূচী দেয়া হয়েছে। তাতে করে নিবাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিবাচনের আগেই বিজিবি মোতায়েনের সম্ভবনা রয়েছে।