শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতাঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন নদীর জায়গা দখলের পর এবার রাষ্ট্রয়াত্ত খাদ্য গুদামের জেটি নির্মাণের জন্যে মেঘনার বুকে বসানো হয়েছে ভারী লোহার খুঁটি। এতে করে বর্ষা মৌসুমে নৌ-চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি নৌ-দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নদীতে খাদ্য বিভাগের জেটি নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। জেলা প্রশাসন বলছে, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই খাদ্য বিভাগকে নদীতে কাজ করতে হবে। অন্যথায় তারা কাজ করতে পারবেন না।
সরেজমিনে আশুগঞ্জ নৌবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাদ্য গুদামের জেটি নির্মাণের জন্য মেঘনার বুকে সারি বদ্ধ ভাবে গাঁথা হয়েছে লোহার খুঁটি। এসব খুঁটি নদীতে বসাতে খাদ্য বিভাগ নদী সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরের অনুমতি নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। তবে নবনির্মিত রাষ্ট্রায়াত্ত খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআইডব্লিওটিএ এর সহযোগিতা নিয়ে নদীতে কার্যক্রম চালানো হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র আশুগঞ্জ-ভৈরব নৌ-বন্দরের উপ-পরিচালক শহীদ উল্লাহ বলেন, তারা এখানে খাদ্য গুদামের জেটি নির্মাণ করতে চেয়েছিল। আমারা আপত্তি দিয়েছি। আমাদের আপত্তির কারণে তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। তাদেরকে বলা হয়েছে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে নদীর বুকে স্থাপনা নির্মাণ করতে।
এদিকে আশুগঞ্জ নব নির্মিত আধুনিক সাইলোর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বিমল ভূইয়া বলেন, বিআইডব্লিটিএ এবং আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। নতুন করে নকশা করা হচ্ছে। বিআইডব্লিটিএ নদীতে একটি জেটি নির্মাণ করবে। আমরা তাদের অনুরূপ একটি জেটি নির্মাণ করবো। আপাতত কাজ বন্ধ আছে। জেটি নির্মাণ করতে তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। এর বাইরে কোনও প্রসঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর বলছে, অনুমতি ছাড়া নদীর জায়গায় স্থাপনা করার সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে ক্ষতিয়ে দেখা হবে। এ সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিফতরের উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘জেটি নির্মাণের বিষয়টি আমাদের নজরে এখনও আসেনি। যেহেতু নদীতে হাত পড়েছে। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত করবো। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নদী নিরাপত্তা বিষয়ক সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে নদী রক্ষা করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আশুগঞ্জে উল্টো চিত্র। সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানছেন না। আমরা যতদূর জানি নদী ভরাট কিংবা নদীর মধ্যে জেটি নির্মাণ করতে হলে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এইখানে তারা কোনও অনুমতি নেননি। সেই বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ আমাদের নিশ্চিত করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি জেটি নির্মাণ করার পর অনুমোদন নিবেন? যদি এখানে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন না নিয়ে জেটি নির্মাণ করা হয় তাহলে এটি অবৈধ।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘আশুগঞ্জ নতুন সাইলোর জন্যে মেঘনা বক্ষে জেটি নির্মাণের বিষয়টি আমরা অবগত আছি।
তারা অনুমতি না নেওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ ইতোমধ্যে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা যে কোনও প্রতিষ্ঠানে হোক না কেন, যদি তারা কিছু নির্মাণ করতে চায় তাহলে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নদীতে কাজ করতে হবে। আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি। নদীর প্রবাহে যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না ঘটে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য। নদীর প্রবাক সঠিক রাখার বিষয়টি অব্যশই নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে সম্প্রতি আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের উত্তরা অংশে বিশাল এলাকা জুরে বালিফেলে মেঘনা নদীর জায়গা ভরাট করে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন। এ ছাড়া ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ নদীর পাড়ে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে ও নদী দখল করছে আশুগঞ্জে। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ব্যনস্থা গ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন।