শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে দিনভর এবং গত শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের দ্বারা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে হেফাজতের তান্ডব ও সহিংসতার ঘটনায় মোট ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার সকালে তিনটি ও মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। নতুন চারটি মামলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় ৩টি ও সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিটি মামলাতেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার বুধল এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ও হাইওয়ে থানায় হামলার ঘটনায় সদর থানায় তিনটি ও সরাইলে সহিংসতার ঘটনায় সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ চারটি মামলায় অজ্ঞাতনামা সাড়ে পাঁচ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৫টি ও আশুগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দায়ের করা ঐ ৭টি মামলায় সাড়ে ৮ হাজার লোককে আসামি করা হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এনিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে হামলার ঘটনার সময় বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার হয়। এছাড়া গণমাধ্যমেও হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থাকলেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতিও নিরূপণ করা যায়নি।
এদিকে ধ্বংসযজ্ঞ সরেজমিন দেখতে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল, বিকালে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে মাহবুবুল আলম হানিফ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাসমূহ পুনঃর্নির্মাণ করে দেবে। তারা বলেন, হামলার সঙ্গে হেফাজত, বিএনপি যেই জড়িত থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি মো. আবদুর রহিম বলেন, হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় সদর থানায় আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মেয়রের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউস, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃ সদন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, হেফাজতের কর্মীরা আশুগঞ্জে ও তান্ডব চালিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোলপ্লাজায় ও ঐখানকার পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ভাঙ্গচুর ও লুটপাট করে ।