শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন
ভান্ডারিয়া প্রতিনিধিঃ
প্রতিদিন ঋণের চাপ মাথায় নিয়েই নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা, কিন্তু কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। ভরা মৌসুমে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ও সংলগ্ন নদীগুলোতে ইলিশের অনুপস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলেরা। স্থানীয় জেলাদের মতে, অবৈধ জাল এবং ঝাটকা মछলির ধরার ফলে নদীগুলোতে ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে। জাটকা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, আগামীতে এই অঞ্চলের ইলিশের ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পিরোজপুরের নদীগুলোর মধ্যে বড় নদী হিসেবে পরিচিত কঁচা, পোনা, কালিগঙ্গা ও বলেশ্বর। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, অনেক নৌকা নিয়ে জেলেরা ইলিশ ধরার কাজে ব্যস্ত রয়েছে এবং ঝাকের পর ঝাক ধরে উঠছে কচা ও বলেশ্বরের সুস্বাদু ইলিশ। কিন্তু যখন জেলাদের কাছে পৌঁছানো যায়, তাদের বাস্তবতা বেড়িয়ে আসে। গত দু’তিনদিন ধরেও জাল ফেললেও প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা মিলছে না। মাঝে মাঝে একটি দু’টি ইলিশ ধরা পড়লেও, সেগুলোর আকার খুব ছোট হওয়ায় জেলেদের উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। তাদের একমাত্র অবলম্বন হলো নৌকা ও জাল, যে আশায় তারা নদীতে যেতে পারছেন। কিন্তু হতাশায় তারা বাড়ি ফিরছেন।
দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরে কঁচা, বলেশ্বর, কালিগঙ্গা ও সন্ধ্যা নদীসহ অন্যান্য নদের জলযাত্রা সন্তোষজনক ছিল। কয়েক বছর পূর্বে এই নদীগুলিতে ভালো পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ত, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। কঁচা নদীর মোহনায় উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, জেলেরা ইলিশ আহরণে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না। তাদের কারো সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, এই কয়েকদিন ধরেই তারা এই অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বলেছেন, “পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় তার উপরে আছে এনজিওর কিস্তির চাপ।”
অপরদিকে, চড়খালী ফেরি ঘাটের দুই দিকে বিকেলে ইলিশের বাজার বসে। তবে, ইলিশ শূন্যতায় একেবারে পণ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা ইলিশ কিনতে এসে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ইলিশের দাম বর্তমানে আকাশচুম্বী, ১ থেকে ১.৫ কেজির প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত। দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ের ক্ষমতার বাইরে থাকায়, স্থানীয়দের ইলিশের স্বাদ না পেয়ে হতাশ হতে হচ্ছে।
স্থানীয় আঃ বারেক হাওলাদার মন্তব্য করেন, “অবৈধ জাল এবং জাটকা ধরার কারণে ইলিশ নেই। জেলা মৎস্য বিভাগের পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত নয়। কয়েক বছর পূর্বে আমরা যে পরিমাণ মাছ পেতাম, বর্তমানে তার দেখা মেলে না।”
একজন জেলে মোঃ সালাম হাওলাদার বলেন, “বাধা জালের কারণে আমরা মাছ পাচ্ছি না। প্রতিদিন জাল ফেলেও কিছু পাই না। এনজিওর কিস্তির চাপ আমাদেরকে অনেক ভোগায়।” এখানে আসা শিক্ষিকা মিনতি দাস জানান, “ভেবেছিলাম এবছর ইলিশের দাম অপেক্ষাকৃত কম থাকবে, কিন্তু তা হয়নি।”
এদিকে, সিনিয়র উপজেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেছেন, “অতীতে পিরোজপুরের নদীগুলোতে কোনও নাব্যতা সংকট ছিল না, তবে বর্তমানে তা দুবচর দেখা দিয়েছে।”