শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
২০০৩ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদান। এরপর ২০১৩ সালে এএসআই ও ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত। শেষের পদোন্নতি পেয়েই বে’পরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। জ’ঙ্গি, মা’দক, স’ন্ত্রাসসহ বিভিন্ন মিথ্যা মা’মলার ভ’য় দেখিয়ে সমানে কামিয়ে নিয়েছেন অ’বৈধ টাকা। সেই টাকায় গত তিন বছরে একটি আলিশান বাড়ি, তিনটি প্রাইভেট গাড়িসহ বিপুল ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এক-দুই বছর নয়, টানা ৭ বছর একই জে’লায় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পদোন্নতির পর আলাদিনের চেরাগ পাওয়া সেই পুলিশের এসআই মো. আকরাম হোসেন ওরফে ডন আকরাম। গ্রামের বাড়িতে তিনি ‘ওসি আকরাম ’ নামে পরিচিত। এসআই আকরাম হোসেনের বি’রুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগ করা হয়েছে দু’র্নীতি দ’মন কমিশনে (দুদক)।
অ’ভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ জে’লা গো’য়েন্দা সংস্থা ডি’বিতে থেকে বেশ কয়েকবার বদলি হয়। এবার বদলি হলে চলে যেতে হলো।
সর্বশেষ ডি’বিতে দায়িত্ব পালনকালে জে’লায় প্রভাব বিস্তারের অ’ভিযোগে তাঁকে বদলি করেন ঈশ্বরগনজ থানায়। তিনি সেখানে চাকরী করতে নারাজ! তিনি দাবি করেন ময়মনসিংহ জে’লায় আর চাকরী করবেন না?
দু’র্নীতি দ’মন কমিশনে করা অ’ভিযোগ থেকে জানা যায়, এসআই আকরাম হোসেন ময়মনসিংহ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে একটি পাঁচতলা বাড়ির কাজ চলছে , জমি কিনেছেন ২ কোটি টাকার, কাজ করছেন আরও তিন কোটি টাকার। রাজধানীতে চাকরী কালে কোটি টাকার জমি কিনেন। জামালপুর সদরে নান্দিনা বাজারে জমি কিনেন, নিজ গ্রামে , বিস্তর কৃষিজমি, তিনটি প্রাইভেট কার ও বিপুল নগদ অর্থের মালিক। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে পাঁচতলা বাড়িটির মালিক এসআই আকরাম হোসেন থাকলেও তার দাবি বোনদের জমিতে বাড়ি করছেন। বাড়ির দাওয়ান জানান,এই বাড়ির কাজ করতে বহু টাকা লাগবে। কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে তিনি জানান,স্যার আকরাম স্যার জানেন,তার পরেও ৫ কোটি টাকা লাগতে পারে।
ময়মনসিংহের আরও বিলাসবহুল ও আধুনিক বাড়িগুলোর মধ্যে এটি একটি। সৌন্দর্য, আভিজাত্য এবং মূল্য বিবেচনায় স্থানীয়রা বাড়িটির নাম দিয়েছে ‘স্বর্ণকমল’।
জানাগেছে, এসআই আকরাম হোসেনের শুশুরবাড়ি মুক্তাগাছা এলাকায় সেখানে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা মূলের জমি কিনেছেন বলে অ’ভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে জমি কিনে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে এসআই আকরাম হোসেন পুলিশের প্রবিধান ল’ঙ্ঘন করেছেন। পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পুলিশ অফিসারগণ নিজ জে’লা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজিপি) পূর্বানুমতি ছাড়া স্বনামে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, চাকর-বাকর বা আশ্রিত ব্যক্তির নামে বা বেনামে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না’।
জামালপুরের নান্দিনায় বোনের নামে প্রায় ৫ বিঘা জমি কিনেছেন বলে অ’ভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আকরাম হোসেনের এক স্বজন জানান, কাগজে-কলমে বোনদের নামে দেখানো হলেও এসব জমি প্রকৃত মালিক এসআই আকরাম হোসেনের নামে। তিনটি প্রাইভেট কারেরও মালিক তিনি। একটিতে নিজে চলেন। অপর দুটিতে ছেলেমেয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।
তার নিজ গ্রামের বাসিন্দা তাজমল হোসেন জানান, আকরাম হোসেনের বাবার আগে অর্থ-সম্পদ তেমন না থাকলেও এখন কোনো কিছুর অভাব নেই।
আকরাম হোসেন গ্রামে বিস্তর কৃষিজমি কিনেছেন। ময়মনসিংহ শহরে বাড়ি ও শুশুর বাড়ি মুক্তাগাছায়, গাড়ি এবং নগদ টাকা করেছেন। সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার মালিক বলে শুনেছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, আকরাম ভাইতো ওসি নাকি হয়েছে?
ময়মনসিংহ জে’লা পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাকরি জীবনে আকরাম হোসেন ৮ বছর ধরেই ময়মনসিংহ জে’লায় কর্মরত আছেন।
ভালুকা ও ময়মনসিংহ ৩ নং পুলিশ ফাঁড়ীতে থাকার সময় জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। চাঁ’দাবাজি ও গ্রে’ফতার বানিজ্যের অ’ভিযোগে ফাঁড়ী থেকে প্রত্যাহার করে। পরবর্তী সময়ে নানাভাবে ম্যানেজ করে যোগদান করেন ডি’বিতে। সেখানে তার ভাগ্য খুলে যায়। আগের দুই ওসির সময় তার ভাগ্য খুলে যায়।
৩ নং ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকার সময় শত শত নিরীহ মানুষকে ধরে এনে না’শকতা, জ’ঙ্গি ও মা’দক মা’মলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভ’য় দেখিয়ে এবং চাঁ’দাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অ’ভিযোগ রয়েছে তাঁর বি’রুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ময়মনসিংহ জে’লা গো’য়েন্দা সংস্থা ডি’বিতে চাকরী করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। কোটি টাকা কামানোর পেছনে তৎকালিন দুই ওসির দোয়া ছিল?
অ’ভিযোগ রয়েছে, অ’ভিযানে গেলে মা’দক কারবারিদের রাস্তায় টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এসআই আকরাম হোসেনের নামে ৮ টি অ’ভিযোগ আইজিপি বরাবরে জমা হয়েছে। এসআই আকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বি’রুদ্ধে আনিত অ’ভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। বাড়ির বি’ষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৪ বছর ধরে ডি’বিতে চাকরী করছি সুনামের সাথে,একটি বাড়ি করছি এটা কোন বি’ষয় নয়।
এ বি’ষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি সোয়েল রানা (মিডিয়া) জানান, আমার কাছে কয়েকজন সাংবাদিক জানতে চায়, আমি জেনে বিস্তারিত পরে জানাবো,আমার কাছে তার তথ্য পাঠিয়ে দিন।
সুত্র স্বাধীন নিউজ২৪.কম