শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
যশোরে পুলিশের শারীরিক নির্যাতনে ইমরান হোসেন নামে এক কলেজছাত্রের দুটি কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে যশোর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের কেউ এ নির্যাতনে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্যাতনের শিকার ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, তিনি যশোর সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তার সাথে একই এলাকার অপর একটি ছেলে ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আমবটতলা নামক স্থানে পৌঁছলে স্থানীয় সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা তাদের গতিরোধ করে। এরপর সাথে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে।
ইমরান জানিয়েছেন, এ দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে দৌড় দিলে পুলিশ ধাওয়া করে এবং আটক করে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। সেখানে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে আমবটতলার একটি ফার্মেসিতে নেয়া হয়। কিছুটা সেবা দেয়ার পর তার জ্ঞান ফেরে। তার আগে পুলিশ কৌশলে তার পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে।
এরপর ইমরানের বাবাকে ফোন দিয়ে তাকে ছাড়তে ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরে ৬ হাজার টাকা নিয়ে তারা ইমরানকে ছেড়ে দেয়। ছাড়ার সময় বলা হয় মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে ফের রিমান্ডে নিয়ে মারপিট করা হবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ।
ইমরান আরো বলেছেন, ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। তিনদিন পেটের ব্যথায় মরে যেতে মনে হয়েছে। সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে জানাই। এরপর আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেটের মধ্যে সব ছিড়ে যাচ্ছে। আমারে কোন ওষুধ শান্তি দিতে পারছে না। আমি মনে হয় বাঁচবো না।
ইমরানের মা বুলবুুলী বেগম বলেন, এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করতে পারে যে, দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেটাকে শেষ করে ফেলেছে ওই পুলিশরা। ওর চিকিৎসা কিভাবে করাবো। বাঁচবে কি না জানি না। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই।
ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেছেন, আমার ছেলেটা লেখাপাড়া করে। আপনারা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, কোন খারাপ কাজের সাথে নেই সে। অথচ তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হলো। ডাক্তার বলেছে তার অবস্থা খুব খারাপ। আমি জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার ভিক্ষা চাই।
ইমরানের চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জল বলেন, ইমরানের দুটি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিয়েটিনিন ১ দশমিক ৪ থাকার কথা, কিন্তু ইমরানের তা ছিল ৮ দশমিক ৮। আজ সোমবার এটাও আরো বেড়েছে। দ্রুত তার ডায়ালোসিস শুরু করতে হবে এবং আজই সেটা করা হবে। তবে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, বলা যাচ্ছে না সে রিকভারি করবে কিনা। তার অবস্থায় খুবই শংকটাপন্ন।
এ বিষয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে কোতয়ালি থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান চার কনস্টেবল ওই কলেজ ছাত্রকে আটক করেছিলেন। কিন্তু ইমরান অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার বাবাকে ডেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে ছাড়তে কোন টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন দাবি করেছেন, বিষয়টি জানার পর তিনি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করিয়েছেন। তাছাড়া ওই ছেলে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কি-না তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের কেউ এ নির্যাতনে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্র বাংলাদেশ জার্নাল