শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
গাজী আবুল কালাম,ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে এম এম ওবায়দুল্লাহকে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। সংগঠনের বাইরের লোক দাবি করে ওবায়দুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার প্রতিবাদে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের একাংশ এবং যুবলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মিরা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা সমালোচনার পাশাপাশি,দুই পক্ষের মধ্যে চলছে টানটান উত্তেজনা আর পাল্টা পাল্টি সংবাদ সম্মেলন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক শফিউল হক মিঠু এবং যুগ্ন-আহবায়ক শহিদুল ইসলাম শিকদার স্বাক্ষরিত এক পত্রে এম এম ওবাইদুল্লাহকে প্রথমে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শূন্য পদ দেখিয়ে সহ-সভাপতি পদে কো-অপ্ট করে নেন এবং পরে চলতি বছরের ২০ জানয়ারী সংগঠনের উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া দেন। কিন্তু ইন্দুরকানী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী অনুমোদিত সভাপতি মাহামুদুর রহমান সোহেল ও সাধারন সম্পাদক আল-মামুনের ৫১ সদস্য বিশিস্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি এবং পরে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই তারিখের গঠিত শহিদুল ইসলাম হাওলাদার আহবায়ক ও আরিফুর রহমান টুটুলকে যুগ্ন-আহবায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিস্ট পাল্টা কমিটির কোনটিতেই ওবাইদুল্লাহর কোন নাম নেই। এদিকে গত কয়েক মাস আগে সংগঠনের সভাপতি সোহেলের ব্যাংকে চাকরি হলে তার ঐ পদটি শূন্য হয়। পরে ঐ শুন্য পদে ওবায়দুল্লাহকে জেলা নেতৃবৃন্দ সহ-সভাপতি পদে কো-অপ্ট করে নেন। কিন্তু সম্প্রতি উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করে তিনি বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে যোগদান করায় তাকে নিয়ে আ.লীগের সহযোগী সংগঠন গুলোর দলীয় ফোরামে আলোচনা শুরু হয়।
এদিকে গত ৯ জুলাই ওবায়দুল্লাহ জামায়াত পরিবারের সন্তান এবং তিনি অতীতে আ.লীগের কোন সহযোগী সংগঠনের নেতা বা কর্মি তো দুরের কথা কোন সমার্থকও ছিলেননা এমন দাবি করে ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সেচ্ছাসেবক লীগের একাংশের নেতাকর্মিরা। এসময় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদক সহ বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য নেতাকর্মি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ২০১৩ সালে তার নামে একটি আ.লীগের অফিস পোড়ানের মামলা হয়। এর আগে সে যুবদলের কমিটিতে ঢোকার চেস্টা করেছিল। কিন্তু জামায়াত মনা হওয়ায় সে সময় দলে তাকে জায়গা দেয়নি তারা। এরপর ঘুরেফিরে দলের কিছু স্বার্থন্বেশী মহলকে ম্যানেজ করে কৌশলে আ.লীগের সহযোগী সংগঠনে ঢুকে পড়ে সে। ঐ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন আহবায়ক কমিটির ১ নং যুগ্ন-আহবায়ক দাবিদার আরিফুর রহমান টুটুল।
অপরদিকে এর একদিন পর গত ১১ জুলাই পিরোজপুর প্রেসক্লাবে তাকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বর্তমানে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম ওবায়দুল্লাহ। ঐ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আ.লীগ পরিবারের লোক দাবি করে বলেন, আমি ২০১৪ সালের পূর্বে ঢাকার যাত্রাবাড়ি ছাত্রলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষায়ক সম্পাদক ছিলাম এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ছাত্র আইন পরিষদ এর খুলনা মহানগরীর সাধারন সম্পাদক পদে আছি। আমি ও আমার পরিবার আগে থেকে আ.লীগের অনুসারী। একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে ইন্দুরকানী উপজেলা সেচ্ছাসেক লীগ নেতা আরিফুর রহমান টুটুল বলেন, যেহেতু আমাদেরকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি কমিটি ভাঙ্গা বা নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে সেহেতু আমাদের কমিটি বহাল থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের কাউকে না জানিয়ে কিংবা কোন সভা আহবান না করে আগের কমিটির কোন সদস্য নয় এমন ব্যক্তিকে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হল তা আমাদের বোদগম্য নয়।
শুধু তাই নয়, তিনি সম্পূর্ণ আ.লীগ বিরোধী ঘরানার লোক এবং ২০১৩ সালে আ.লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানোর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। তাই জামায়াত শিবির সমার্থক ওবায়দুল্লাহকে অনতিবিলম্বে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মুজিব আদর্শের একজন সৈনিককে উক্ত সাংগঠনিক পদে বসানোর আহবান জানান তিনি।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যার সাথে আ.লীগ কিংবা কোন সহযোগী সংগঠনের কোন যোগসূত্র নেই সে কিভাবে একটি সংগঠনের দায়িত্ব পায়।
এসব অভিযোগ প্রত্যাখান করে এম এম ওবাইদুল্লাহ প্রতিবেদককে জানান, তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় কোন্দলের কারণে তাকে আওয়ামী লীগ অফিস পোড়ানোর একটি মামলায় আসামী করা হয়েছিল। এ ঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা না থাকায়, মামলার অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আমিই এখন এই সংগঠনের বৈধ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক শফিউল হক মিঠু জানান, ইন্দুরকানী উপজেলা কমিটির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তারা জেলার নেতৃবৃন্দকে জানাতে পারতো। এজন্য সংবাদ সম্মেলন করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অধিকার সংগঠনের কারো নাই। তিনি আরও বলেন, ইন্দুরকানীতে এখন কোন আহবায়ক কমিটিি নেই। ওখানে পূর্নাঙ্গ কমিটির কার্যক্রম চলছে। ওবাইদুল্লাহ যে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বর্তমানে ইন্দুরকানীতে ওই কমিটিই বহাল আছে।