শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় এক ইতালি প্রবাসীর বিরুদ্ধে তার আপন ভাই-ভাতিজা ও ভাবীকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে শনিবার (২২ আগস্ট) দুপরে বিদ্যাকুট গ্রামে হয়রানির শিকার পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এ সময় অত্র ইউনিয়নের বিশিষ্ট লোকজনও যোগ দেন। তারা বহিরাগতদের বাদী করে নিজের ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রবাসী তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।
বিশ্বস্ত একটি সুত্রে ও গ্রামবাসীর বর্ননায় জানা যায়, মো. দুলাল মিয়া বাদী হয়ে তাজুলের বড় ভাই আবু শামীমের তিন ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল-আমীন, মাস্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন এবং তাদের মা লুৎফা বেগমকে আসামি করে গত ১৯ জুলাই নবীনগর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মো. দুলাল মিয়া প্রবাসী তাজুলের একটি জায়গার লিজ গ্রহীতা। সে ঐ মামলায় গাছ চুরি ও বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ আনেন।
গত বছরের ২৩ আগস্ট প্রবাসী তাজুলকে মারধর ও পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তা মানিক, তার দুই ভাই রায়হান উদ্দিন আল-আমীন ও জসিম, চাচা আবু তাহেরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন জেলা সদরের গোকর্ণঘাটের মো. গণি মিয়ার ছেলে আরশ মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায়।
এ সব অভিযোগের আগে প্রবাসী তাজুল নিজেই গত বছরের ১৭ জুন নবীনগর থানায় তার ভাই আবু তাহের, তাহেরের স্ত্রী আলেয়া, মেয়ে তানিয়া আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে জায়গা-জমি দখল ও হত্যার হুমকি দেওয়ার একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তার এ সমস্ত অভিযোগ উদ্ভট, মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করা হয় ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বিদ্যাকুট ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান, সুর সম্ম্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, মো. খোরশেদ আলম, মাহবুবুর রহমান, আতিকুর রহমান, কুদ্দুস মোল্লা প্রমুখ।
বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, গাছ কেটে নেওয়া বা জায়গা দখলের কথা আমরা শুনিনি। এ সব ঘটনায় তৃতীয় ব্যক্তিরা জড়িত।
সুর সম্ম্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধ। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
ইতালী প্রবাসী মো. খোরশেদ আলম বলেন,একটি পরিবারকে হয়রানি করার জন্য মূলতঃ এসব মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে।আর এ কারনে একটা এতিম ছেলেকে জেল খাটতে হয়েছে। তাজুল বিনা কারনে মানিকদের পরিবারের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে এবং তাদের এখান থেকে গাছ কেটে নিচ্ছে। এসব করে সে গ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে।
চাচা আবু তাহের বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে আমরা দোকান ২০ বছরের জন্যে ভাড়া নিয়েছি। স্কুল পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো রকম সমস্যা নেই। তবু ও ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল আমাকে দোকান থেকে উচ্ছেদের জন্যে এসব করেছেন। তার কারণে আমি জেল খেটেছি। বাড়িতে ঝামেলাও তার কারণে।
সাবেক ইউপি সদস্য প্রবাসী তাজুল ইসলামের ভাবী লুৎফা বেগম বলেন, আমার ছেলেরা কেউ বাড়িতে থাকে না। এক বছর ধরে দুলাল, নূরুল ইসলাম, তপন ও আরশ আলী এসে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, তাজুলের জায়গায় পা দিলে আমারে কিয়ামত করে ফেলবে।
কাস্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক ও তার ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল-আমীন বলেছেন, তারা কর্মস্থলে নিজেদের কর্মে যখন নিয়োজিত, তখনই তাদের এসব মামলার আসামি করা হয়। অথচ তারা এসব বিষয়ে কোনো কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে বিদ্যাকুট ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক বলেন, এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমি এটি মীমাংসার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারেনি। সাংবাদিকরা জায়গা দখল বা গাছ কাটার কোনো প্রমাণ পাননি। এদিকে এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।