শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১১শিশুর মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ দিনে।আর এই মৃত্যু হয়েছে পানিতে পড়ে যাওয়ার কারনে।
চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ২১ আগষ্ট পর্যন্ত মারা গেছে ৩১ জন শিশু।
বাংলাদেশে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া গবেষণা তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মারা যায়। তার ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয় পুকুর, ডোবা, বালতি বা পানির পাত্রে পড়ে। মৃতদের ৮০ শতাংশ বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে মারা যায়।
আর এ মৃত্যুর হার বেশীরভাগ সময় বাড়তে থাকে বর্ষাকালে। সাধারণতঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষি কাজ বা মাছ চাষ অথবা গোসলের জন্য
ছোট -বড় পুকুর বা জলাধারের পাশাপাশি বিল এবং নদী থাকে। শিশুরা তাদের পরিবারের লোকজন থেকে সামান্য চোখের আড়াল হলেই
ঐ সমস্ত স্থানে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ এর মতে পানিতে ডুবে
শিশু ও কিশোরদের মৃত্যুর হার বাড়ার পিছনে চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হলঃ(১)স্বজন বা বাবা-মায়ের অসতর্কতা (২) বিষয়টি নিয়ে উদাসীনতা (৩) বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ডোবা, বিল, পুকুর বা নদী থাকা এবং(৪) সর্বোপরি শিশু ও কিশোরদের সাঁতার না জানা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নথি ওবিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়,১১ আগস্ট সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের রুবেল মিয়ার দুই বছরের মেয়ে রোজা আক্তার ও ১২ আগস্ট সদর উপজেলার উত্তর সুহিলপুরের রুবেল হোসেনের চার বছরের মেয়ে হাফসা বেগম বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে মারা যায়। ১৪ আগস্ট আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়ার( খোলাপাড়া) গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ডোবায় পড়ে মারা যায় জেলা শহরের শান্তিবাগ এলাকার মোজাম্মেল হোসেনের মেয়ে আসমা বেগম (৮)। একই দিনে মারা যায় সদর উপজেলার চিনাইর পূর্বপাড়া গ্রামের সোহাগ মিয়ার চার বছরের শিশু মেয়ে নোহা আক্তার বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে। ১৫ আগস্ট বাড়ির পাশের বিলের পানিতে পড়ে মারা যায় বিজয়নগরের মণিপুর গ্রামের হজরত আলীর ছেলে ফরহাদ মিয়া (৩)। ১৮ আগস্ট পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যায় সদর দক্ষিণ পৈরতলায় মুহাম্মদ শাহীন মিয়ার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৯)। গত ২৬ জুলাই পানিতে ডুবে মারা যায় সদর উপজেলার উলচাপাড়া গ্রামের ফালু মিয়ার তিন বছরের মেয়ে রোজা আক্তার। ৫ আগষ্ট বাক্ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আমিন(৫) বাড়ির উঠানে খেলার ফাঁকে বাড়ির পেছনের ডোবায় পড়ে মারা যায়। সে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর টংগীপাড়া গ্রামের ইয়াসিন মিয়ার ছেলে। ৮ আগস্ট সদর ও নবীনগরে পানিতে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়।
গবেষণা প্রতিষ্টান বলছে, পানিতে ডুবে এক থেকে চার বছর বয়সের শিশুরা সবচেয়ে বেশি মারা যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সাঁতার না জানা। সাতাঁর জানা ও সাঁতার শেখার মাধ্যমে এই মৃত্যু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হতে পারে। এ ছাড়া শিশুদেরকে দিনের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে পানি থেকে দূরে রাখতে পারলে এ সমস্ত বিপদ এড়ানো সম্ভব। ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শিশুদেরকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে ৮০ শতাংশ এবং সাঁতার শেখানোর মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ মৃত্যু কমানো সম্ভব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন বলেন, এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে। যাদের বাড়ির পাশে পুকুর বা জলাশয় আছে সেখানে শিশুদের সুরক্ষার জন্য পুকুর বা জলাশয় এর চারপাশে বেড়া দেওয়া উচিত। পানি থেকে উদ্ধারের পর শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে স্বতঃস্ফূর্ত রাখা উচিত এবং শিশুদের কে অবশ্যই সাঁতার শেখানো উচিত।