শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
নিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা গণধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে হওয়া লংকাকাণ্ডের এত ঘটনা ঘটলেও তার কিছুই এতদিন টের পাননি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী।
এমনকি বন্ধু আব্দুল্লাহ, রাকিব ও মাঝি খলিল যে তার ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে কারাভোগ করছেন সে বিষয়েও ধারণা ছিল না জিসার। নৌকায় ঘুরার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোডে নিজ বাড়িতে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ওই স্কুলছাত্রীর।
তিনি জানান, গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় বন্ধু আব্দুল্লাহর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর আব্দুল্লাহ খাবার আনার কথা বলে চলে যায়। আব্দুল্লাহ ফিরে না আসায় ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে তার প্রেমিক ইকবালকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন। পরে ইকবালের সঙ্গে শনির আখড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। ৬ আগস্ট ইকবালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কোনো নথি দেখাতে পারেননি তিনি।
স্কুলছাত্রী জানান, বিয়ের পরপরই তারা বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নেন এবং সেখানে তারা দেড় মাস সংসার করেন। এরপর ইকবাল তার বাবাকে ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় জানান এবং তার জীবিত থাকার বিষয়টিও জানান।
এ সময় মোবাইলে তিনি ঘর ভাড়ার জন্য বাবা-মায়ের টাকা চাইতে গেলে প্রথম জানতে পারেন তার বন্ধু আব্দুল্লাহ, রাকিব, মাঝি খলিল তার ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং জেলে আছেন।
স্কুলছাত্রী বলেন, বিয়ে করে দেড় মাস সংসার করেছি। এখন আমি চাই স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে।
বড় বোন জেরি জানান, যা হয়েছে তা একটা দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়েছি।
ভুক্তভোগী দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় এর এক মাস দুই দিন পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা।
স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুলছাত্রীকে নৌকায় করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা। বর্তমানে তিনজন কারাগারে রয়েছেন। আসামিরা হলেন- বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আব্দুল্লাহ, বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার রকিব ও নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান।
গত ৪ জুলাই মূলত ওই স্কুলছাত্রী বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল নামে এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই তার মন খারাপ ছিল। বিষয়টি নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াও হয়। পরে ২৩ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে মা রেখা আক্তারকে ফোন দেন তিনি। তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ফোনের সূত্র ধরেই তার মা রেখা আক্তার ও বাবা জাহাঙ্গীর ছুটে যান নবীগঞ্জ এলাকার সেই মোবাইল ফোনের দোকানটিতে।
এদিকে ২৪ আগস্ট দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাডিশনাল এসপি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।