শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা
সরকারের আবাসন প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষে সরকার সারাদেশে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ৩১ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে।
আর এ প্রকল্পের আওতায় অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঘর পাবার জন্য ইতিমধ্যেই আশুগঞ্জ উপজেলার ১শ ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে যাচাই বাছাই পূর্বক ৩১ জন বীরমুক্তিযোদ্ধার তালিকা ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হবে।
গৃহ নির্মাণের জন্য অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরি চূড়ান্ত করতে এ সব বীরমুক্তিযোদ্ধা যারা ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, আশুগঞ্জের অত্যন্ত কর্মঠ ও পরিশ্রমি নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজিমুল হায়দার আবেদনকারী প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বাড়ি ছুটে চলেছেন এবং আবেদনকারীদের মধ্যে কারা কারা অস্বচ্ছল তা খুঁজে বের করার জন্য প্রবলভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে করে প্রকৃতপক্ষে অন্তত অস্বচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্বারাই যেন গৃহগুলো পায়।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ নাজিমুল হায়দার( ইউএনও) জানান, ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই অস্বচ্ছল ভাবে জীবন যাপন করছেন। এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যিনি গৃহহীন কিংবা রোদ-বৃষ্টিতে ভাঙ্গা ঘরে কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। তাই আমরা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া ঘর নির্মান প্রকল্পের আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকৃত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে চাই।’
আর তাই এ কাজটি স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করতে তিনি ছুটে যাচ্ছেন আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি। কথা বলছেন আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে। পাশাপাশি কারো প্রলোভনে পড়ে যেন কেউ কোন দালাল চক্রকে টাকা পয়সা না দেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করছেন। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে।
যাচাই-বাছাই কাজে ইউএনওকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সৈয়দ রাফি উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হেবজু মিয়া ও আব্দুল করিম।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজিমুল হায়দার বলেন,‘ আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাতি। তাই প্রকৃত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে হাসি ফুটানোর সরকারি এ উদ্যোগকে সফল করার লক্ষ্যে আমি ও আমার কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন মাধ্যমে অফিসে বসেও যাচাই বাছাই কাজ সম্পন্ন করা যেত।কিন্তু আমি সেটি করিনি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে নিজের মনের তাগিদেই অতিরিক্ত শ্রম ও সময় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা যাচাই -বাছাইয়ের জন্য কাজ করছি। যাতে করে প্রকৃত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আর তাদের মুখে হাসি ফুটলেই আমার এ পরিশ্রম স্বার্থক হবে।’
উল্লেখ্য যে, মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলমান ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের আওতায় অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই আবাসন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সরকারের তরফ থেকে সারা দেশে প্রাথমিকভাবে ১৪ হাজার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে একতলা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে সম্পূর্ণ ভাবে বিনা টাকায়। এসব বাড়ি হবে ৯৮০ বর্গফুট আয়তনের। আর একেকটি বাড়ি তৈরি করার জন্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতিটি বাড়িতে থাকবে তিনটি বেডরুম ও একটি ড্রইং-ডাইনিং।
আগ্রহী অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার আবেদন সংগ্রহ বা তার সম্মতির ভিত্তিতে জেলা ও উপজেলাওয়ারি তালিকা পাঠাতে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সুপারিশসহ তালিকা যাচাই বাছাই শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।