শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি
৬ বছর বয়সের একটি শিশু, নাম তার স্মৃতি। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামে। অভাবের সংসারে মা নিজেই শিশুটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে গৃহপরিচারিকার কাজে দেন বছর খানেক আগে। এ সময়ের মধ্যে সেখানে তার কপালে কোনো দিন জোটেনি একটুখানি আদর ও ভালোবাসা। জুটেছে শুধু গৃহকর্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত ঐ শিশুটি এখন পুলিশ হেফাজতে আছে।
রবিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তরুণীকে দেখেই জড়িয়ে ধরল শিশুটি। তরুণীর দিকে তাকিয়ে ফেলফেল করে হাসল শিশুটি। । তরুণীও শুরুতে ভ্যাবেচেকা খেলেন। এরই মধ্যে শিশুটি জানলো যে,ঐ তরুণী একজন পুলিশ। তাকে কেউ কিছু বলবে না এমন কথাই শিশুটিকেআশ্বস্ত করে। পোশাক পরিহিত অন্য পুলিশ সদস্যদেরকে দেখে শিশুটি বলতে লাগল, ‘খালাম্মাকে থানায় নিয়েন না, মাইরেন না।’অত্যন্ত আকুতি ও মন ভরা ভালবাসার সুরে গৃহপরিচারিকা ঐ শিশুটি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বললেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মধ্যপাড়ার জুবিলি রোডের পুকুরের পাড়ের একটি বাড়ির নিচতলায় এমনি দৃশ্য দেখা যায় । পুলিশের পাশাপাশি ঐ বাড়িতে জড়ো হওয়া আশেপাশের লোকজন গৃহপরিচারিকা ঐ ছোট্ট শিশুটির কথায় অনেকটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। নির্যাতনের শিকার হয়েও বাড়ির গৃহকর্ত্রীর প্রতি তার এমন ‘মায়া’উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিল ।
এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী কুলসুম বেগমকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। কুলসুম বেগম মধ্যপাড়ার আলমগীর মিয়ার বাড়ির নিচতলায় ভাড়ায় থাকেন। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মচারী ও স্বামী আরত মিয়া ওষুধ ব্যবসায়ী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি।
গৃহপরিচালিকা ঐ শিশুটির মা জানায়, প্রায় এক বছর আগে তার মেয়েকে ঐ বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে পাঠান। সম্প্রতি ওনার কাছে খবর আসে যে, তার মেয়েকে মারধর করা হয়। এ খবরের ভিত্তিতে তিনি শনিবার সকালে মেয়েকে দেখতে যান। তখন মেয়ের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত হন। বিষয়টি রবিবার সকালে তিনি লিখিতভাবে থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে বিকেলে পুলিশ গিয়ে তার মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
পুলিশের অভিযানের সময় শিশুটিকে অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত দেখা যায়। সবার সামনে কখনো সে মারধরের শিকার হয়েছে বলে জানায়, আবার কখনো ‘না’ করে মাথা নেড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের এক নারী সদস্য দরজা আটকে শিশুটির সঙ্গে একা কথা বললে শিশুটি মারধরের বিষয়টি জানায়। রাগের মাথায় গৃহকর্ত্রী তাকে মারধর করত বলে সে স্বীকার করে।
এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, শিশুটিকে বিভিন্ন সময়ে মারধরের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। শনিবার এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, শিশুটি ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করে। এমন শিশুকে গৃহপরিচারিকা রাখাও ঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অভিযানে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শিশুটিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে মারধরের কথা বলেছে। তবে লিখিত অভিযোগে যে ধরনের মারধরের কথা বলা হয়েছে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। গৃহকর্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’সবকিছু যাচাই করে দেখা হবে বলে ও তিনি জানান ।