শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন
ইন্দুরকানী প্রতিনিধি :
প্রতিবন্ধী ফজলুল হক হাওলাদার। ডাক নাম ফজলু মিয়া। বয়স তার ৫৫ পেরিয়ে ষাটের কাছাকাছি। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার কলারন গ্রামের এসবিআই ইট ভাটা সংলগ্ন বলেশ^র নদের পাড়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস তার। স্ত্রী, ৫ মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়েই ফজলু মিয়ার জীবন সংসার। তবে ষোল বছর আগে গ্যাংগিন রোগে বাঁ পায়ে পচন ধরে এই ফজলু হাওলাদারের। আর্থিক অভাব অনটনের কারনে সে সময় নিজের ভাল চিকিৎসা করাতে না পারায় কেটে ফেলতে হয় তার এ পা-টি। সেই থেকেই এক পা হারানো এ মানুষটিকে চলতে হচ্ছে ক্রাচে ভর করে। আর এ অবস্থায় একে একে কেটে গেছে তার প্রায় ষোলটি বছর। জীবীকার টানে নিজের পুরোনো বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী আলেয়া বেগমকে (৪০) নিয়েই বছর তিনেক আগে নদীর পাড়ে কোনমতে বসতি গড়েছেন ফজলুল হক। এদিকে সন্তানরা অভাবগ্রস্থ থাকায় নিজের ভরণ পোষন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় কোন উপায়ান্ত না পেয়ে সংসার চালাতে তিন বছর আগে ফজলু মিয়া নিজেই বেছে নেন নদীতে মাছ ধরার পেশা। তাই কচা আর বলেশ^র নদীর মোহনায় প্রতিদিন জাল ফেলে জীবীকা নির্বাহ করে চলে তার এ সংসার। কিন্তু দীর্ঘ ষোল বছর আগে পা হারিয়ে তার কপালে এখন পর্যন্ত জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। জীবীকার প্রয়োজনে জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় বসতি গড়ায় সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন এ মানুষটি। আর তার এই দুরাবস্থা নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে পড়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইন্দুরকানী নাগরিক ফোরামের সভাপতি মাসুদ সাঈদী সহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের। এরপর মাসুদ সাঈদী সহ অনেকে প্রতিশ্রæতি দেন এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়ানোর। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী আজ শনিবার দুপুরে তিনি তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় ফজলুল হকের জন্য একটি হুইল চেয়ার প্রদান করেন এবং তার ঝুঁপড়ি ঘরটি ভেঙ্গে নতুন একটি টিনের ঘর তৈরী করার সকল ব্যবস্থা করে দেন। এসময় ইন্দুরকানী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আহসানুল হক ছগির, দৈনিক কালেরকন্ঠ ও ৭১ টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি জে আই লাভলু, সাংবাদিক মারুফুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, ইন্দুরকানী নাগরিক ফোরামের প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান, মামুন, সালাউদ্দিন, ইয়াছিন, আসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধী ফজলুল হক আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, মোর এই অসহায় অবস্থা দেইখ্যা উনি যে সাহায্য সহযোগীতা করছেন হ্যা মুই জীবনেও ভুলমুনা।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী প্রতিবেদককে বলেন, গনমাধ্যমে বৃদ্ধ ঔ প্রতিবন্ধী জেলের অসহায় অবস্থার সংবাদ দেখে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তবে সামান্যতম হলেও এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার ভাল লাগছে।
এ ব্যাপারে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদ জানান, অসহায় ঐ জেলে এখন আবেদন করলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।